Knowledge is Power 😎

গুজরাট সম্পর্কে বিস্তারিত অজানা তথ্য | Bengali Gossip 24

কোন মন্তব্য নেই

ভারতের গুজরাট রাজ্য উন্নত কেন? গুজরাটি রা ব্যবসায় সফল হয় কেন?



গুজরাট সম্পর্কে বিস্তারিত অজানা তথ্য | Bengali Gossip 24


অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভারতবর্ষের পঞ্চম উন্নত রাজ্য গুজরাত। ভারতের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই রাজ্য ও নানাবিধ শিল্প ও উৎপাদন জাত দ্রব্যের বিপুলসংখ্যক কারখানার জন্য দেশ-বিদেশের বিখ্যাত।


2018 সালের গুজরাটের নর্মদা নদীর উপর নির্মিত স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বিশ্বের সবথেকে উঁচু মূর্তির তকমা পেয়েছে। জনপ্রিয় পর্যটক স্থল হিসেবে পরিচিত মূর্তি স্থলটি স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী বল্লভ ভাই প্যাটেল এর উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে। 


গুজরাট প্রাচীন কাল থেকেই ইতিহাসের পাতায় পরিচিত একটি নাম। যেখানে সম্ভবত বিশ্বের প্রথম সমুদ্র বন্দর লোথাল ও প্রাচীন উন্নত মানব সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতার কয়েকটি অংশে বিদ্যমান রয়েছে। সংস্কৃত শব্দ গর্জরা থেকে আগত শব্দ গুজরাট সমগ্র ভারত বর্ষ তথা বিশ্বে পরিচিত।


তাই এখানকার দারুন দারুন তথ্য গুলি শুনলে নিশ্চই অবাক হয়ে যেতে হয়।

(Unknown Things about Gujrat)


পশ্চিম ভারতে অবস্থিত গুজরাট রাজ্যের আয়তন 1 লক্ষ 96 হাজার 24 বর্গকিলোমিটার। 2011 অনুযায়ী রাজ্যের মোট জনসংখ্যা 6 কোটি 4 লক্ষ্য 39 হাজার 692 জন। জনসংখ্যা অনুযায়ী রাজ্যটি ভারতবর্ষে নবম স্থানে রয়েছে। সবরমতী নদী হলো গুজরাটের দীর্ঘতম নদী। এই রাজ্যের 1600 কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল ভারতের সব থেকে দীর্ঘ উপকূলবর্তী এলাকা। প্রকৃতির অসাধারণ সৃষ্টি কচ্ছের রণ। 


দারুন দেখতে এই ভূমি ভারতবর্ষ এবং পাকিস্তানের সীমানাবর্তী এলাকায় অবস্থিত রয়েছে। কচ্ছের রণের অধিকাংশ অঞ্চল ভারতের গুজরাট রাজ্যের অন্তর্গত। গুজরাটি ভাষা হলো গুজরাটের আধিকারিক ভাষা। 


কচ্ছের রণ অঞ্চলে প্রচলিত ভাষা কর্চি এবং সিন্ধি। ভারতবর্ষে গুজরাটি মানুষজন তাদের ব্যবসার পদ্ধতি ও উন্নতির কারণে সুপ্রসিদ্ধ। প্রাচীন গুজরাটের ব্যবসায়ীদের সাথে আরবীয় ব্যবসায়ীরা বহুকাল ব্যবসার মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। সেই প্রচলিত ব্যবসার প্রধান মাধ্যম ছিল জলবন্দর। প্রাচীনকালের খাম্বাট বন্দর এবং সুরাট বন্দর এর প্রায় সমাপ্তির পরও ভারতের নিজস্ব সবচেয়ে বড় বন্দর কচ্ছ উপসাগর নির্মিত হয়েছে। গুজরাটের মন্দিরা বন্দর বর্তমানে বাৎসরিক 139 মিলিয়ন কার্গো পরিচালনা করে। এছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে বড় করার তেল শোধনাগার গুজরাটের জামনগর রয়েছে। বিশ্বের সবথেকে বড় জাহাজ ভাঙ্গার আংগন গুজরাটের আলাং শহরে অবস্থিত। রাজ্যের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে দাহেজ বন্দরের নির্মিত হয়েছে ভারতের একমাত্র লিকুইড ক্যামিকেল পোর্ট টার্মিনাল। 


ভারতের লবণের চাহিদা 78 শতাংশের পূর্তি গুজরাট করে থাকে। গুজরাট ভারতের মোট সোডা অ্যাশের 98 শতাংশ সরবরাহ করে। তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলনসহ বহু ছোট-বড় দেশি-বিদেশি কারখানা গুজরাটে উপস্থিত। পুরো বিশ্বে সব থেকে সস্তা চার চাকার গাড়ি হলো টাটা ন্যানো। এর কারখানা গুজরাটের রয়েছে। গুজরাটের জামনগর পিতল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এই রাজ্যের সুরাট শহর বিশ্বজুড়ে হীরা ব্যবসা ও পালিশ এর জন্য প্রসিদ্ধ। কয়েক লক্ষ মানুষ সুরাটে হীরা ব্যবসার সাথে নিযুক্ত রয়েছেন। সুরাট শহর ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সাথে সবথেকে পরিষ্কার শহর গুলির মধ্যে একটি। তাই স্বভাবতই গুজরাটের বেশিরভাগ বাসিন্দারা আর্থিক দিক দিয়ে সচ্ছল। তবে গুজরাটি শুধু দেশেই নয় বিদেশেও তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের সফলতার পরিচয় দিয়েছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক হাজার হোটেল এবং মোটেলের মালিকানা গুজরাটিদের হাতে। এই ব্যবসায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক অংশীদার গুজরাটি। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে গুজরাটি দের অংশ বেশি রয়েছে। 


এই রাজ্যের প্রায় 85 শতাংশ গ্রামের রাস্তা প্রায় সব রকমের আবহাওয়ার জন্য নির্মিত হয়েছে। গুজরাটের প্রায় সমস্ত গ্রামে ই বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। 


গুজরাটের আগের রাজধানী ছিল আমেদাবাদ। এই শহরের নাম দেন সুলতান আহমেদ শাহ। আমেদাবাদ শহর বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়া শহরের একটি। গুজরাটের সবথেকে বড় শহরও আমেদাবাদ। বর্তমানে গুজরাটের রাজধানী শহর হলো গান্ধীনগর। সবরমতী নদীর ধারে অবস্থিত শহর ভারতের তথা সারা বিশ্বের জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান। মহাত্মা গান্ধীর আসল নাম ছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। মহাত্মা গান্ধীর এক জগৎ বিখ্যাত বৃহৎ সবরমতী আশ্রম আমেদাবাদে অবস্থিত। গুজরাট ভারতের সবথেকে সুরক্ষিত শহরের মধ্যে গণ্য হয়। যার দরুন বহু পর্যটক গুজরাটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলি পরিদর্শনে আসেন। গুজরাটের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে গান্ধীনগর স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দির, তারাকাতে অবস্থিত তারকাদেশ মন্দির, বারংবার ধ্বংসের কবল থেকে পুনঃনির্মিত হয়ে বিরাজমান সোমনাথ মন্দির, আমেদাবাদের বিখ্যাত জামা মসজিদ, সূর্য মন্দির এবং আরো বহু জাদুঘর এবং দর্শনীয় স্থান গুজরাট কে ভারতবর্ষের এক পরিচিত পর্যটনস্থল বানিয়েছে। 


ভারতের সবথেকে বেশি দুধ উৎপাদনকারী রাজ্যের মধ্যে অন্যতম হলো গুজরাট। নিরামিষ পিজ্জা! হ্যাঁ! পিজ্জার কথাই বলছি, প্রথম নিরামিষ পিজ্জার চলন ভারতের গুজরাট থেকে শুরু হয়। ম্যাকডোনাল্ড এবং আরো সমস্ত ব্র্যান্ড তাদের পিজ্জা বানানোর পদ্ধতি কিছুটা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় গুজরাটে। কারণ গুজরাটে নিরামিষ আহার বেশি করা হয়। তারপর গুজরাটের থালির নাম শুনেছেন? নিরামিষ বলে ভাবছেন কেমন খাবার হবে কে জানে! তবে শুনুন নিরামিষ খাবারের পদ অনেক বেশি হয় এবং সুস্বাদু হয়। গুজরাটিদের ফেমাস কারী, ধোকলা, চাট, দইবড়া, আলু পুরি ও আরো কত যে মুখরোচক খাবার রয়েছে তা গুণে শেষ করতে পারবেন না। 


আধুনিক গুজরাটের ব্যবসার পাশাপাশি দেশের বহু প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি উপস্থিত রয়েছে। মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র স্পেস এপ্লিকেশন সেন্টার আমেদাবাদে অবস্থিত। 


তো এই ছিল গুজরাট সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্য।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন