Bengali Gossip 24

Knowledge is Power 😎

ভ্যাটিকান সিটি সম্পর্কে কিছু অদ্ভুত এবং মজাদার তথ্য জেনে নিন | Bengali Gossip 24

কোন মন্তব্য নেই
 Vatican City- Smallest Country In The World

Amazing and Interesting Facts about Vatican City

আজ আমরা ইউরোপের এমন একটি দেশ সম্পর্কে জানবো যেই দেশটির আয়তন মাত্র ০.৪৪ বর্গকিমি বা ১১০ একর। এই কম আয়তনের জন্য এটা পৃথিবীর সবথেকে ক্ষুদ্রতম দেশ। ইতালির শহর রোমের মধ্যেই এর অবস্থান যার নাম ভ্যাটিকান সিটি। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ভ্যাটিকান সিটি সম্পর্কে কিছু অদ্ভুত এবং মজাদার তথ্য (Amazing and Interesting Facts about Vatican City) 

ইতালির রাজধানী রোমের মধ্যে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটি দেশটিকে আধিকারিক ভাবে ভ্যাটিকান সিটি রাষ্ট্র অথবা স্টেট অফ ভ্যাটিকান সিটি বলা হয়। ভ্যাটিকান সিটির স্বাসন ব্যবস্থার প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন পোপ। ইনি রোমান ক্যাথলিক গির্জারও প্রধান। ১৯২৯ সালে ল্যাটেরান ট্রিটির মাধ্যমে এই দেশ স্থাপিত হয়ে ছিল। ল্যাটেরান ট্রিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল কিংডম অফ ইতালি এবং হোলি সি- এর মধ্যে।

ভ্যাটিকান সিটির মোট জনসংখ্যা ১০০০ জন। শুধুমাত্র জন্ম নিলেই ভ্যাটিকান সিটির নাগতিকত্ব পাওয়া যায় না। নাগরিকত্ব পেতে গেলে সেখানকার লোকদের কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হয়। সেই দেশে সাধারণত ল্যাটিন এবং ইতালিয়ান ভাষায় বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে সরকারি ভাবে কোনো ভাষা সেখানে নেই। এই দেশের মুদ্রা ইউরো।
.
ভ্যাটিকান সিটির নিজস্ব পোস্ট অফিস রয়েছে। সেখানে তাদের নিজস্ব পোস্টাল সার্ভিস এবং নিজস্ব পোস্টাল স্ট্যাম্প রয়েছে। ভ্যাটিকান সিটির নিজস্ব ডাক পরিষেবার পাশাপাশি নিজস্ব টেলিফোন পরিষেবা এবং নিজস্ব ইন্টারনেট পরিষেবাও রয়েছে।

মাত্র ১.০৫ কিমি দৈর্ঘ্য এবং ০.৮৫ কিমি প্রস্থ বিশিষ্ট এই দেশটিতে কোনো হাইওয়ে কিংবা এয়ারপোর্ট নেই। হেঁটে চলাফেরা করাটাই উত্তম। দেশের পশ্চিম প্রান্তে ভ্যাটিকান সিটি হেলিপোর্ট রয়েছে। যা কিছু বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়। এই দেশের সবচেয়ে কাছে এয়ারপোর্ট  লিওনার্দো দা ভিন্সি ফিউমিচিনো রয়েছে যা ইতালির রাজধানী রোম শহরে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রেলপথ রয়েছে ভ্যাটিকান সিটিতে। সেগুলি সাধারণত জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে প্রত্যেক শনিবার পর্যটকরা এই রেলগুলি দিয়ে ভ্রমণ করতে পারে। ভ্যাটিকান সিটির গাড়ি গুলির নিজস্ব লাইসেন্স প্লেট রয়েছে। এসসিভি- স্টেটাস সিভিটাটিস ভাটিক্যানি।

পুরো দেশের মধ্যে একটি মাত্র ঔষধালয় রয়েছে। ১৮৭৪ সালে স্থাপিত এই ভ্যাটিকান ফার্মেসি পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ততম একটি ফার্মেসি। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। ইতালিতে কোনো ঔষধ না পাওয়া গেলে সেখানকার মানুষ এই ফার্মাসিতে চলে আসে।

পৃথিবীতে মাত্র দুটি দেশে সর্বমত স্বীকৃত বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য নিদিষ্ট কোনো আইন নেই। একটি হলো ফিলিপাইন এবং অপরটি হলো ভ্যাটিকান সিটি। ভ্যাটিকান সিটি স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও ইউনাইটেড ন্যাশনের সদস্য না। তাদের শুধুমাত্র অবজার্ভার স্টেটাস আছে। 

স্বাধীন রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটির নিজেদের কোনো  সামরিক সুরক্ষা বেবস্থা নেই। ইতালির আর্মিরাই সব দেখাশোনা করে। গার্ডরাই দেশের পোপ এবং নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকে। 

ভ্যাটিকান সিটি নামকরা ধর্মীয় স্থান হলেও পর্যটকদের কাছে ভ্যাটিকান সিটি খুবই জনপ্রিয়। সেখানে অনেক জনপ্রিয় জায়গা রয়েছে যেমন সেইন্ট পিটার স্কয়ার, রাফেল রুমস, সিস্টিন চ্যাপেল, ভ্যাটিকান মিউজিয়াম ইত্যাদি।  শুধু মাত্র সেখানকার মিউজিয়াম গুলি দেখতেই বহু পর্যটক সেখানে বেড়াতে যায়। তাই বলা যায় ভ্যাটিকান সিটির অর্থনীতির অনেকটায় আসে এই পর্যটক শিল্প থেকে। পর্যটক শিল্পের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন মুদ্রা, প্রকাশনা ইত্যাদি থেকেও অনেক অর্থ উপার্জন করা হয়।
সবশেষে, ভ্যাটিকান সিটি সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ হলেও সেখানকার মানুষরা খুবই ফুটবল প্রেমী হয়। তাদের নিজস্ব ন্যাশনাল ফুটবল টীম রয়েছে। প্রত্যেক বছর সেখানে ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ হয়।

এই ছিল ক্ষুদ্রতম দেশ ভ্যাটিকান সিটি সম্পর্কে কিছু তথ্য। প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।


কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্পেন সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিন | Interesting Facts about Spain in Bengali by BengaliGossip24

কোন মন্তব্য নেই

স্পেন সম্পর্কে অজানা তথ্য (Unknown Facts about Spain) 

স্পেন সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিন


আজ আমরা দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের এক সংস্কৃতির এবং নানা ধরণের পর্যটক ভর্তি দেশ স্পেন সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জানবো। যাকে আধিকারিক ভাবে কিংডম অফ স্পেনও বলা হয়। সাধারণত আমরা যখন  স্পেন নামটা শুনি সবার প্রথমে ফুটবলের কথাই মনে পরে। কিন্তু স্পেন দেশটির সাথে এমন অনেক কিছুই জড়িয়ে আছে যার জন্য স্পেন আজ ইউরোপের জনপ্রিয় একটি দেশ। তো জেনে নেওয়া যাক স্পেন সম্পর্কে কিছু অদ্ভুত এবং মজাদার তথ্য। 

স্পেনের মোট আয়তন ৫ লক্ষ ৫ হাজার ৯৯০ বর্গমিটার। আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীতে ৫১ তম স্থান অধিকার করেছে। তাছাড়া এই বৃহৎ আয়তনের জন্যই দক্ষিণ ইউরোপের সব থেকে বড়ো এবং পশ্চিম ইউরোপের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড়ো দেশ হিসাবে স্পেনকে গণ্য করা হয়। এই দেশটির নাম যেহেতু স্পেন তাই এই দেশের লোকদের স্প্যানিশ বা স্প্যানিয়ার্ড বলা হয়। এরা স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই রোমান ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসী। এই দেশের আধিকারিক বা রাষ্ট্রীয় ভাষা স্পেনিশ হলেও সেখানে আরো কিছু ভাষা প্রচলিত আছে যেমন কাতালান, অক্সিটান ইত্যাদি। তবে মজার ব্যাপার হলো স্পেনে যত সংখ্যক স্প্যানিশ ভাষার লোক থাকে তার থেকে বেশি স্পেনিশ ভাষার লোক যুক্তরাষ্ট্রে  এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গুলির মধ্যে বসবাস করে। চীনা ভাষার পাশাপাশি স্পেনিশ ভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রচলিত ভাষা। 

স্পেনের কয়েক প্রকার ভাষার প্রচলন থাকার একটি প্রধান কারণ হলো কয়েক শতাব্দী আগে স্পেন দেশটি বেশ কয়েকটা ছোট বড়ো অংশে বিভক্ত ছিল। যেখানে প্রত্যেকটা অংশেই স্পেনের স্বাসকরা স্বাসন করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেগুলি আলাদা হয়ে যায়। স্পেন ইউরোপ মহাদেশের প্রাচীন শক্তিশালী একটি দেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেনি স্পেন। কারণ সেই সময় স্পেনের গৃহযুদ্ধে বেশ কয়েকলক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। 

ইউরোপের  অন্যান্য দেশ গুলির  তুলনায় স্পেনের মানুষের আয়ু কাল কিছুটা বেশি। বর্তমানে এই দেশের মানুষের আয়ুকাল ৮২ বছর ধরা হয়। মনে করা হয় একটা সময় স্পেনের মানুষের গড় আয়ুকাল ৬০ বছরের উপরে চলে যাবে। স্পেনে দাদু ঠাকুমারা তাদের নাতি নাতনিদের দেখাশোনা করে। কারণ সেখানে বাচ্চাদের দেখাশোনার ব্যবস্থা খুবই কম। আর সেখানকার ছেলে মেয়েরা তাদের বাবা মায়ের নামের শেষ অক্ষরটি নিজেদের নামের সাথে যুক্ত করতে ভালোবাসে। 

স্পেন একটি মিশ্র অর্থনৈতিক সম্পন্ন দেশ। যা বর্তমানে বিশ্বের ১৪ তম  এবং ইউরোপিয়ান দেশ গুলির মধ্যে ৫ তম সবচেয়ে বড়ো অর্থনীতি সম্পন্ন দেশ। যেখানে নামিদামি সংস্থা থেকে শুরু করে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি উৎপাদনে বিশ্বের প্রথম সারির দেশ গুলির মধ্যে পরে। 

তবে ইতালি এবং চীনের পর সবচেয়ে বেশি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট থাকার জন্য স্পেন বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এক জনপ্রিয় স্থল। যেখানে শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই ৮২ মিলিয়নের বেশি পর্যটক সেখানে বেড়াতে এসেছে। সেখানে অনেক জনপ্রিয় জায়গা রয়েছে। যেমন দেশের রাজধানী মাদ্রিদ এবং আলহাম্বরা এল এস্কোরিয়াল ইত্যাদি দ্বীপ গুলি পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। এছাড়াও দেশের অনেক দূর্গ, শহর, এবং পৌরাণিক চার্জ গুলিও পর্যটকদের বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করে। স্পেনে অবস্থিত রোম শিল্প কার্যের এক দারুন নিদর্শন হিসাবে পরিচিত টাওয়ার অফ হারকুলেস  একটি প্রাচীন লাইট হাউস যা এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সমস্ত কিছুর দিকে লক্ষ্য করলে অনায়াসে বলা যেতে পারে যে পর্যন্তন শিল্প স্পেনের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে। 

আপনারা পড়ছেন স্পেন সম্পর্কে তথ্য

স্পেন পর্যটনের পাশাপাশি ভালো ভালো খাবার এবং পানীয়র জন্যও বিখ্যাত যা পর্যটকদের বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করে। সেখানে আলুর তৈরি অমলেট, পাইলা নামক এক বিশেষ চালের খাবার, বিভিন্ন ধরণের সুপ্, নানা ধরণের সামুদ্রিক  মাছের খাবার খুবই প্রচলিত। তাই পর্যটকদের সেখানে খাবারের কোনো অসুবিধা হয় না। আর এই সমস্ত খাবার এবং সমস্ত আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা সেই দেশের হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট গুলি করে থাকে। 

স্পেনের সমস্ত জনপ্রিয় খাবার গুলির পাশাপাশি কিছু বিশ্ব বিখ্যাত উৎসবও রয়েছে যা পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কিছু উৎসব হলো ষাঁড়ের দৌড়, টমেটো ছোড়ার উৎসব ইত্যাদি। এই রকম আরো  প্রচলিত উৎসব গুলিকে স্পেনের পর্যটন শিল্পের অংশ বলা যেতে পারে। বর্তমানে এই উৎসব গুলি এতো জনপ্রিয় যে প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটক স্পেনে বেড়াতে আসে। স্পেনের উৎসব গুলিতে ষাঁড়ের প্রভাব থাকায় স্পেনের জাতীয় পশু হলো ষাঁড়। 

আজ আমরা প্যারিসে যে আইফেল টাওয়ারটি দেখি তা আসলে প্রথমে স্পেনের বার্সেলোনাতেই তৈরি হওয়ার কথা ছিল।  কিন্তু কিছু সমস্যার জন্য তা আর হয়ে উঠে নি। 

সবশেষে আসি স্পেনের ফুটবল নিয়ে।  ফুটবলের সাথে স্পেনের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ট। অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশ গুলির মতো স্পেনের ফুটবলও সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। স্পেন ২০১০ সালে প্রথম বারের মতো ফিফা বিশ্ব কাপ জয় করে। ন্যাশনাল টিমের পাশাপাশি স্পেনের লীগ ফুটবলও সারা বিশ্বের মধ্যে জনপ্রিয়। ইউরোপের প্রথম সারির লীগ গুলির মধ্যে স্পেনের লীগ অর্থাৎ লা লিগা প্রথম দিকেই থাকে। কারণ এই লীগের মধ্যে আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা  ক্লাব যথা ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এবং রিয়েল মাদ্রিদ। 

তো এই ছিল উৎসব এবং ফুটবলের দেশ স্পেন সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।  প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

টাইটানিক জাহাজের অজানা কিছু রহস্য | Unknown Facts Behind Titanic Sinking in Bengali by Bengaligossip24

কোন মন্তব্য নেই

 টাইটানিক জাহাজের অজানা রহস্য 




Unknown Facts Behind Titanic Sinking

বিংশ শতকের শুরুতে নতুন একটি জাহাজ নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। জাহাজটি এতো বড়ো এবং মজবুত যে জাহাজটির নির্মাতারা ভবিষৎ বাণী করেছিলেন স্বয়ং ভগবানও এই জাহাজকে ডোবাতে পারবে না। জাহাজটির নাম ছিল টাইটানিক। জাহাজটি ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল রাত এগারোটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে উত্তর আটলান্টিক সাগরে ডুবন্ত আইসবার্গের সাথে ধাক্কা লেগে জলের তলায় ডুবে যায় এই টাইটানিক। তাও আবার প্রথম যাত্রাতেই। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটে প্রায় পনেরোশোর অধিক যাত্রীর। বাকি যাত্রীরা কোনো রকম বেঁচে গেলেও পরবর্তী সময়ে তাদের বয়ে বেড়াতে হয়েছে এই দুঃস্বপ্ন।  

টাইটানিক জাহাজটির ডিজাইনার টমাস অ্যান্ড্রু দাবি করেছিলেন টাইটানিক কোনো দিনই জলে ডুববে না। আসলে তিনি এমনি এমনি সেই কথা বলেন নি। টাইটানিক জাহাজটির ডিজাইন এমন ভাবে  হয়েছিল যা সকল প্রকার ঝড় এবং প্রতিকূল অবস্থাতেও সমুদ্রে ঠিক ভাবে চলতে পারবে। কিন্তু যেদিন টাইটানিক ডুবে যায় সেই দিন টাইটানিকের বয়স ছিল মাত্র চার দিন। আপাত দৃষ্টিতে আইসবার্গের সাথে ধাক্কায় টাইটানিক ডোবার কারণ  হলেও এর কোনো সঠিক যুক্তি কোনো গবেষকই আজ পর্যন্ত দিতে নি। এক এক গবেষক এক এক কারণ উদঘাটন করেছেন। আর এর ফলেই এই জাহাজ  ডুবে যাওয়ার ঘটনা রহস্যময় হয়ে উঠেছে।

টাইটান ছিল গ্রিক পৌরানের সৃষ্টির শক্তিশালী দেবতা। এই দেবতার কাজ ছিল শুধুমাত্র সৃষ্টি করা। তারই নাম অনুসারে এই জাহাজের নাম রাখা হয় টাইটানিক। এটি আসলে জাহাজটির সংক্ষিপ্ত নাম। এর পুরো নাম হলো আর এম এস টাইটানিক বা রয়াল মেইল স্টিমার টাইটানিক।

টাইটানিক জাহাজটির নির্মাণ কাজ শুরু ২০০৭ সালে। পাঁচ বছর একটানা কাজ করার পর এই জাহাজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। হল্যান্ডের হোয়াইট ষ্টার কোম্পানি এই জাহাজটি নির্মাণ করেন। ষাট হাজার টন ওজন এবং ২৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই জাহাজটি নির্মাণ করতে সেই সময় খরচ হয়েছিল ৭৫ লক্ষ ডলার। এতো বড়ো আকারের জাহাজ নির্মাণ করা সেই সময়ের মানুষ কল্পনাও করতে পারতো না। ১৯১২ সালের ১০ই এপ্রিল সাউদমতম থেকে যাত্রা শুরু করে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে। সেই সময় টাইটানিকের মোট যাত্রী ছিল ২২০০ জন।

টাইটানিকের প্রথম শ্রেণীর  ভাড়া ছিল ৩১০০ ডলার। আর নরমাল ভাড়া ছিল ৩২ ডলার। সেই সময় টাইটানিক নিয়ে সারা বিশ্বে হৈচৈ পরে গিয়েছিলো। তাই সবাই চেয়েছিলো টাইটানিকের এই ঐতিহাসিক যাত্রায় সামিল হতে। টাইটানিক জাহাজটি যখন বন্দর থেকে ছেড়ে যায় তখন বন্দরে বিশাল  জন সমাগম হয়েছিল। নির্ধারিত ৬  যাত্রাকে সামনে রেখে চলা শুরু করেছিল এই টাইটানিক। প্রথম দিন ভালোই কেটেছিল জাহাজের যাত্রীদের। ১৪ ই এপ্রিল দুপুর ২ টার দিকে আমেরিকা নামক একটি  জাহাজ থেকে রেডিও সিগনালের মাধ্যমে টাইটানিকের ক্যাপ্টেনদের জানানো হয় তাদের যাত্রার সামনের বিশাল আকারের একটি আইসবার্গ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে মিসাবা নামক আরেকটি জাহাজ থেকেও এই একই ধরণের সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছিল।

সেই সময় টাইটানিকের রেডিও যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন  জ্যাক ফিলিপ্স এবং হ্যারল্ড ব্রাইড। দুইবারই তাদের কাছে সেই বার্তাটি অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। তাই তারা এই সতর্ক বার্তা টাইটানিকের মূল নিয়ন্ত্রকদের কাছে পাঠায় নি। টাইটানিক দুর্ঘটনায় ৪০ মিনিট আগে ক্যালিফোর্নিয়ান জাহাজের মূল নিয়ন্ত্রক টাইটানিকের রেডিও অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করে এই আইসবার্গটির সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাইটানিকের রেডিও অপারেটরা সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। বলাই বাহুল্য  তাদের এই হেয়ালীপনার জন্যই টাইটানিক ডুবে ছিল।

Unknown Facts Behind Titanic Sinking


আটলান্টিকের তাপমাত্রা তখন শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি। আকাশ পরিষ্কার থাকলেও আকাশের চাঁদ দেখা যাচ্ছিলো না। টাইটানিক যখন দুর্ঘটনার কাছাকাছি পৌঁছে যায় তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন এই আইসবার্গটি দেখতে পান।

আইসবার্গ হলো সমুদ্রে ভেসে থাকা টুকরো টুকরো বরফ কণা। এগুলির একটি বিশেষত্ব হলো ৮ ভাগের মাত্র ১ ভাগ জলের উপরে থাকে। মানে এটার বেশিরভাগ অংশই জলের নিচে থাকে। তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন জাহাজটিকে দক্ষিণ দিকে ঘুরিয়ে নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব প্রচেষ্টায় বৃথা যায়।  জাহাজের ডান দিক আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধীরে ধীরে সেখানে চিড় দেখা দেয়। টাইটানিক জাহাজটি  জায়গায় ডুবে ছিল সেই জায়গাটির নাম হলো নিউফাউন্ডল্যান্ড।

টাইটানিকে ৬ টি কম্পার্টমেন্ট ছিল। টাইটানিক কিন্তু সর্বোচ্চ চারটি কম্পার্টমেন্ট জল শুদ্ধ ভেসে পারতো। কিন্তু সেই সময় টাইটানিকে পাঁচটি কম্পার্টমেন্টে জল ঢুকে গিয়েছিলো। এছাড়া টাইটানিকে জল প্রতিরোধ করার জন্য ১২ টি গেইট ছিল কিন্তু বরফের সাথে ধাক্কা লাগার কারণে  সব গুলি গেইট খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। জল ভর্তি হয়ে ধীরে ধীরে জলের তলায় তলিয়ে যেতে থাকে এই টাইটানিক।

টাইটানিকের নিয়ন্ত্রকরা ধীরে ধীরে বুজতে পারে যে টাইটানিককে বাঁচানো আর সম্ভব না। এর পর রাত ১২ টার সময় লাইট বোর্ট নামানো শুরু হয়। সেই সময় যাত্রীদের  কাছে যথেষ্ট সময় ছিল নিজেদের বাঁচানোর  কিন্তু যাত্রীদের তুলনায় লাইট বোর্ট এর সংখ্যা ছিল অনেক কম। তাই প্রথমে শিশু এবং মহিলাদের নিয়ে যাওয়া হয়। টাইটানিকের অনেক লাইট বোর্ট ধারণের ক্ষমতা ছিল। কিন্তু যেহেতু টাইটানিক বানানোর সময় এর ডিজাইনাররা বলে ছিল টাইটানিক নাকি কোনো দিনই ডুববে না সেই জন্য  বেশি পরিমানে রাখা হয় নি। টাইটানিকের খুব কাছাকাছি আরেকটি জাহাজ দেখতে পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই জাহাজটির সঠিক ব্যখ্যা কেউ দিতে পারেনি। তবে অনেক গবেষক মনে করেন ওটা ক্যালিফোর্নিয়ান জাহাজটি ছিল। ডুবন্ত অবস্থায় টাইটানিকের ক্যাপ্টেনরা ক্যালিফোর্নিয়ান জাহাজ থেকে সাহায্য চেয়েছিলো কিন্তু সেখান থেকে  কোনো সারা শব্দ পাওয়া যায়নি।

রাত ২ টার মধ্যে পুরো জাহাজ ভেঙে আটলান্টিকে তলিয়ে যায়। সেই সময় সেখানে পুরো বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে যায় যার কারণে সেখানে  ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাত ৪ টা  নাগাদ দ্য কাফেসিয়া নামক জাহাজটি এসে বাকি প্যাসেঞ্জের গুলিকে উদ্ধার করে নিউ ইয়র্কের দিকে রওনা হয়েছিল।

অনেকের ধারণা টাইটানিক জাহাজটি অভিশপ্ত ছিল। সেই জন্য টাইটানিককে নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। ১৯৯৮ সালে টাইম নিউস  এই প্রসঙ্গে বলেছিলো টাইটানিকে নাকি এক মিশরীয় রাজকুমারীর অভিশপ্ত মমি ছিল যার কারণে টাইটানিক ডুবে ছিল।

এর পর কেটে যায় অনেক বৎসর।  ১৯৯৫ সালে টাইটানিকের খোঁজ শুরু করে একদল বৈজ্ঞানিক। যেই স্থানে টাইটানিক জাহাজটি ডুবে ছিল সেই স্থানে টাইটানিকের কিছু ধ্বংশাবশেষ পাওয়া যায়। টাইটানিককে নিয়ে অনেক গবেষণা করা হলেও আজও এর সঠিক রহস্য উদঘাটন  হয় নি। 

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Unknown and Interesting Facts about Salman Khan by Bengali Gossip 24 | বলিউডের ভাইজান সম্পর্কে কিছু অজানা এবং মজাদার তথ্য

কোন মন্তব্য নেই

বলিউডের ভাইজান সম্পর্কে কিছু অজানা এবং মজাদার তথ্য 

Unknown and Interesting Facts about Salman Khan

'সলমান খান'! বলিউডে এই নামটাই যথেষ্ট। পরিচালক, প্রযোজক কিংবা নায়িকা - এতো কিছু দেখার প্রয়োজন নেই। শুধু সিনেমার পোস্টারে তার মুখটায় ছবি হিট করার জন্য যথেষ্ট।  সম্প্রীতি বলিউডে তার ক্যারিয়ার জীবনের ৩০ তা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। 

সলমান খান নব্বইয়ের দশকে বলিউডে পা রাখলেও জীবনে অনেক স্ট্রাগল করেই আজ সুপারস্টারের তকমা পেয়েছেন। তিনি আজ বলিউডের ভাইজান সল্লুমিয়াঁ। 'বিবি হো তো এসি' সিনেমার মধ্য দিয়ে তিনি বলিউড এ পা রাখেন। সেই সিনেমায় তিনি সাপোর্টিং রোলের ভূমিকা পালন করেছিলেন।   কিন্তু ছবিটি বক্সঅফিসে বিশেষ কিছু করতে পারে নি। এর পরের বছরই সুরোজ বারজাতিয়ার ছবি "ম্যানে প্যার কিয়া" ছবিতে ভাগ্যশ্রীর বিপরীতে নায়কের  ভূমিকায় দেখা গেলো সলমান খানকে। এই ছবির জন্য তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে ভাইজানের ক্যারিয়ার উঠতে লাগলো। 

সলমান খান (ভাইজান) সম্পর্কে কিছু অজানা মজাদার তথ্য-

Unknown and Interesting Facts about Salman Khan

➥ একজন সুপারস্টার হয়েও তিনি নাকি বেশি দামের টি-শার্ট পড়েন না। শোনা যায় তিনি নাকি ৫০০ টাকার বেশি মূল্যে টি-শার্ট পড়েন না। 

  
➥ ভাইজান কিন্তু গায়ের সাবান নিয়ে বেশ খুঁতখুঁতে। প্রাকৃতিক 'সোপ' ছাড়া তিনি অন্য কিছু ব্যবহার করেন না।


➥ 'এক থা টাইগার' মুভির শুটিং চলাকালীন সলমান যে ক্যাফেতে বসে রোজ জলখাবার  যেতেন, পরবর্তী কালে সেই কাফের নাম হয়ে যায় সলমান ক্যাফে। 



➥ 'এক থা টাইগার' ছবিতে সেই দৃশ্যের কথা সকলেরই মনে আছে নিশ্চই, যেখানে টাইগার অর্থাৎ সলমান বরফের উপর জোয়ার (ক্যাটরিনা) ছবি এঁকেছিল রং দিয়ে। সেই ছবি নাকি সলমান খান নিজের হাতেই এঁকেছিলেন। 



➥ 'বজরঙ্গি ভাইজান' সিনেমায় হতো না, যদি সলমান তার ব্যস্ত শিডিউল থেকে এই ছবির শুটিংয়ের জন্য সময় না বের করতে পারতেন। 


➥ সলমান খান ভীষণ রকম ভাবে চাইনীজ খাবার খেতে পছন্দ করেন। মুম্বাইয়ের চায়না গার্ডেনের চাইনীজ খাবার ভীষণ প্রিয় ভাইজানের। 

➥ সলমান খানের দুটি নিজস্ব পোষ্য ঘোড়া আছে, একটির নাম বজরঙ্গি এবং আরেকটির নাম ভাইজান।

➥ সলমান খানের মতো একজন সুপারস্টার একদমই টেকস্যাভি নন। শোনা যায় বজরঙ্গি ভাইজান এ 'সেলফি লে লে লে .....' আগে পর্যন্ত নাকি ভাইজান সেলফি শব্দটির সাথে সেই ভাবে পরিচিত ছিলেন না। 

➥ 'জয় হো' সিনেমার পোস্টার ভাইজান নিজের হাতে এঁকেছিলেন। 

➥ সলমান খানের গল্প লেখার গোপন ক্ষমতাও রয়েছে। ভীর ছবিটির গল্প ভাইজান স্বয়ং লিখেছিলেন। 

➥ সুরোজ বারজাতিয়ার ছবি 'প্রেম রতন ধন পায়ো' ছবি শুটিংয়ের জন্য সলমান তার পরিচালক বন্ধুর কাছ থেকে একটা টাকাও পারিশ্রমিক নেন নি। 

➥ 'ওয়ান্টেড' সিনেমায় সলমান খান কোনো বডি ডাবল নিয়ে কাজ করেন নি। ছবিতে  অ্যাকশন দৃশ ছিল, প্রতিটাতে নিজের চেষ্টায় কাজ করেছেন ভাইজান। 


এই ছিলো আমাদের সলমান ভাইজান সম্পর্কে কিছু মজাদার তথ্য। প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের রোমাঞ্চকর কিছু কাহিনী | Some Thrilling Stories about Everest Climber

1 টি মন্তব্য
এভারেস্ট জয়ের রোমাঞ্চকর কিছু কাহিনী  

Some Thrilling Stories about Everest Climber


পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো পর্বতশৃঙ্গের নাম হলো মাউন্ট এভারেস্ট, যার উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার। এই পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় পোঁছানো অনেকেরই স্বপ্ন থাকে। কিছু বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের জন্য তা হয়ে উঠে না। 

আপনি এটা জেনে অবাক হবেন যে মাউন্ট এভারেস্টে যাত্রাকালীন গড়ে প্রতি ১০ জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যু ঘটে। এটা অনেকটা কঠিন কাজ হলেও অনেক পর্বত আরোহী  এভারেস্ট জয় করতে সফল হয়েছে। এবং আশা করা যায় ভবিষতেও করবে। তো চলুন জেনে নেওয়া কে কখন কিভাবে প্রথম এভারেস্ট জয় করেছিল? এভারেস্ট জয়ের রোমাঞ্চকর কিছু কাহিনী নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদনটি 

পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে উঠার স্বপ্ন সেই ১৯২০ সাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সেই পর্বতশৃঙ্গে উঠতে কেউই সফল হচ্ছিলো না। কারণ আমরা জানি যে এভারেস্টে উঠা খুব একটা সহজ বেপার নয়। সেখানে পৌঁছানোর জন্য অনেক জটিল এবং ভয়ঙ্কর জায়গার সমুক্ষিন হতে হয়। কারণ এই পর্বতের রাস্তায় প্রতি পদে পদে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। আর এই মিশনে আজ অব্দি অনেক লোক পরাজিত হয়েছে আবার অনেক লোককে জীবনও ত্যাগ করতে হয়েছে। এই পর্বত মালাতেই অনেক মানুষের মৃত দেহ বরফের নিচে চাপা পরে রয়েছে, যা আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। 

কিন্তু এতো প্রতিকূল পরিবেশ থাকার ফলেও কিছু সাহসী লোক হার মানে নি। তারা  অনবরত এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। আর সেই সব সাহসী লোকদের মধ্যে একজন ছিলো নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে। তেনজিং নোরগে  প্রথম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার কৃতিত্ব অর্জন করে ছিল। তো জেনে নেওয়া যাক ওর এভারেস্ট জয়ের সফলতার কাহিনী। 

Hillary & Tenzing


১৯৫২ সালে নেপালের বাসিন্দা তেনজিং নরগের ইচ্ছে হয়েছিল মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার। তাই সে আরেকজন পর্বত আরোহী সুইজারল্যান্ডের রেমেন ল্যাম্বার্ড এর সাথে এভারেস্টে চড়ার ঝুঁকি নিয়ে নেয়। কিন্তু তেনজিং সেই  ব্যর্থ হয়। ১৯৫২ সালে শেরপা তেনজিং এবং রেমেন ল্যাম্বার্ড এভারেস্টের শৃঙ্গের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলো। কিন্তু খুব বাজে আবহওয়ার জন্য তাদেরকে সেখান থেকেই ফিরে চলে আসতে হয়। মাউন্ট এভারেস্টের এতো কাছাকাছি গিয়েও ওদের ফিরে  আসার দুঃখটা রেমেন ভুলে গেলেও তেনজিং কিছুতেই  পারছে না। তেনজিং আবার পরের বৎসর মানে ১৯৫৩ সালে সাত জন ইংরেজ এবং দুই জন সুইজারল্যান্ড এর পর্বতারোহীদের নিয়ে এভারেস্ট জয়ের যাত্রায় বেরিয়ে পরে। তেনজিং, এডমিন হেনরি এবং তাদের টিমকে নিয়ে তারা এপ্রিল যাত্রা শুরু করে। বরফের রাস্তা, মাইনাস তাপমাত্রা, হিমনদী, বরফের টুকরো ইত্যাদি বাধা বিপত্তিকে পেরিয়ে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে যাচ্ছিলো। এবং সময়ের সাথে সাথে তারা নিজেদের উদ্দশের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রায় ২০০০০ ফুট উঁচুতে উঠার পর একটি ছোট্ট বরফের  খাদকে অতিক্রম করার জন্য হেনরি লাফ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ওর শরীরের ভারের কারণে সেখান থেকে কিছু বরফ খসে পরে। সেই মুহর্তে হেনরি বরফের নিচে চাপা পরে নিজের প্রাণ হারাতে বসেন বসে ছিল। সেই সোম পেছন থেকে তেনজিং তাকে দড়ি ছুড়ে দেয়। সেই জন্য হেনরি কোনো রকম প্রাণে বেঁচে যায়। এরপরই তেনজিং এবং হেনরি রা এভারেস্টের চূড়ার কাছাকাছি চলে আসতে  থাকে। 

কিন্তু তেনজিংয়ের আগে পর্বত আরোহনের যাত্রা শুরু করে ছিল চার্লস ওয়ার্নের দল। যারা তেনজিংয়ের টিমের অনেক আগেই এভারেস্টের চূড়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে ছিল। অর্থাৎ কোনো কারণে ওয়ার্নের টীম এভারেস্টের যাত্রায় ব্যর্থ হলে বা পর্বত আরোহন বন্ধ করে যদি ফিরে আসে তাহলেই তেনজিংয়ের টিম এভারেস্টের চূড়ার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। তেনজিং এবং হেনরির টিম প্রায় অনেকটাই আরোহন করে ফেলেছিলো কিন্তু এভারেস্টের কাছের শেষ খাঁদ গুলি অত্যন্ত কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আর সেই খাঁদ গুলি পার করতে গিয়ে অনেক পর্বত আরোহীরা নিজেদের  জীবন ত্যাগ করেছেন। ঠিক সেই জায়গায় ১৯৫৩ সালের ২৬শে মে মাউন্ট এভারেস্টের শিখরের কাছ থেকে ওয়ার্নের টীম ৩০০ ফুট দূরে ছিল। কিন্তু ওয়ার্ন এবং তার সঙ্গীরা খুবই ক্লান্ত ছিল। তাদের শরীরে আর চলার মতো শক্তিও ছিল না। তাই তাদেরকে শৃঙ্গ থেকে মাত্র ৩০০ ফুট দূরে থেকেই ফিরে আসতে হলো। 

ইতিহাস হয়তোবা অন্য কারোর নাম লিখতে আগ্রহী ছিল। ওয়ার্নের টীম ফিরে আসার পরই তেনজিং এবং হেনরির টীম আগে চলে যায়। এবং তারা একটি রাত সেই স্থানে পার করার পরই তারা পরের দিন সকালে নিজেদের যাত্রার উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। তখন সেখানে তাপমাত্রা -২৭ ডিগ্রি ছিল, পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল ছিল তবুও এই সাহসী বীরেরা হাল ছারে নি। তারা সমস্ত পরিস্থিতি এবং নিজেদের শরীরের কঠিনতা পার করে একের পর এক বাধা অতিক্রম করতে থাকে। এই ভাবেই তারা সকাল ৯টার সময় দক্ষিণ শিখড়ে পৌঁছে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের অক্সিজেন কমতে থাকে এবং তখন তাদের কাছে আর পর্যাপ্ত কোনো অক্সিজেনও ছিল না। যে তারা পর্বতের পুরো অভিযান সম্পূর্ণ করতে পারবে বা তারা সেইখান থেকে ফিরে আসতে পারবে। সেই সময় তারা নিজেদের মৃত্যুকে ঠিক যেন সামনেই দেখ ছিলো। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই তেনজিংয়ের গতি কমতে থাকে আর তার পাঁ আস্তে আস্তে ভারী হতে শুরু করে। ঠিক একই রকম অবস্থা হেনরিরও হচ্ছিলো। তখন হেনরি, তেনজিংয়ের দিকে কিছুক্ষন তাকায় এবং তেনজিং কে বিশ্রামের জন্য থামতে বলে। সেই কিছুক্ষন সময়ে হেনরি তেনজিংয়ের অক্সিজেনের নলকে পরিষ্ককার করে কারণ তেনজিংয়ের শ্বাস নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছিলো। তারপর তারা তাদের মাথা ঠান্ডা রেখে সমস্ত কঠিন পরিস্থিতিকে পিছনে ফেলে আস্তে আস্তে এভারেস্টের চূড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। 

এই ভাবেই শেষ পর্যন্ত ১৯৫৩ সালের ২৯শে মে সকাল ১১ তার সময় তেনজিংয়ের পাঁ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থান এভারেস্টের চূড়ায় রেখেছিলো এবং নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিল। সেই দিন ইতিহাসের পাতায় তেনজিং এবং হেনরির নাম লেখা হয়েছিল। সেই সময় তাদের আনন্দের কোনো সীমা ছিল না। তাদের মাথায় অতীতের কোনো কষ্ট এবং সামনের পরিশ্রমের কোনো চিন্তাই ছিলো না। কারণ সেই সময় তারা দুইজনেই যেন অন্য পৃথিবীতে ভেসে গিয়েছিলো। কারণ পৃথিবীর সব থেকে উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে দেখার দৃশ্য তারায় সর্বপ্রথম দেখেছিলো। কিন্তু একটাসময় তাদের অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছিলো। সেই সময় ওরা যদি থেমে যেত তাহলে ওদের আর ইতিহাস লেখা হতো না। তাই মনের জোরটাই আসল। মনের জোর থাকলে সমস্ত অসম্ভবকে যে সম্ভব করা যায় সেটা তেনজিং এবং হেনরি দেখিয়ে দিয়েছে। 

এই ছিল মাউন্ট এভারেস্ট নিয়ে কিছু কথা। প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ  

1 টি মন্তব্য :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন