Knowledge is Power 😎

রতন টাটা বনাম ফোর্ড | Bengali Gossip 24

কোন মন্তব্য নেই

রতন টাটার প্রতিশোধের গল্প 

রতন টাটা বনাম ফোর্ড | Bengali Gossip 24


ভারতের জনপ্রিয় শিল্পপতি রতন টাটা বুজিয়ে দিয়েছেন যে প্রতিশোধ নিতে হলে কাউকে শারীরিক, মানসিক কিংবা আর্থিক ভাবে ক্ষতি করতে হয় না। 1991 সালে রতন টাটা টাটা গ্রূপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সময় টাটা গ্রুপ ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় ট্রাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এই সাফল্যের ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে 1998 সালে রতন টাটা আধুনিক প্যাসেঞ্জার কার তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।পরিকল্পনা অনুযায়ী, 1998 সালের শেষ দিকে টাটা মোটরস টাটা ইন্ডিকা নামে একটি আধুনিক কার লঞ্চ করতে সক্ষম হয়। টাটা ইন্ডিকা ছিল ভারতের কোনো কোম্পানি কর্তৃক ডিজাইনকৃত প্রথম আধুনিক কার। এটি ছিল রতন টাটার স্বপ্নের প্রজেক্ট। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু যখনই কারটি বাজারে আসে এটির বিক্রি বা জনপ্রিয়তা একেবারেই আশানুরূপ ছিল না। এই কারের বিক্রির হার ছিল খুবই নগন্য। ফলে টাটা গ্রুপ তাদের কার বিজনেস বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। 1999 সালে বিখ্যাত ফোর্ড কোম্পানি টাটা গ্রুপের কার বিজনেস ক্রয় করার আগ্রহ  প্রকাশ করে। সে অনুযায়ী তারা টাটা গ্রপকে  ফোর্ড কোম্পানির হেড অফিসে আমন্ত্রণ জানায়। রতন টাটা এবং তার টিম ফোর্ডের আমন্ত্রণে সেখানে যান। টাটা গ্রুপ এবং ফোর্ড কোম্পানির প্রতিনিধিগণ সেখানে তিন ঘণ্টার একটি দীর্ঘ মিটিংয়ে বসে। কিন্তু সেখানে রতন টাটা তার টিমের সামনে ফোর্ডের চেয়ারম্যান বিল ফোর্ড কর্তৃক বাজে ভাবে অপমানিত হন। উক্ত মিটিংয়ে বিল ফোর্ড রতন টাটাকে বলেছিলেন আপনি কিছুই জানেন না তাহলে আপনি কেন পেসেঞ্জার কার নির্মাণ শুরু করেছেন? আমরা আপনার কার বিজনেস ক্রয় করে আপনাকে বড় ধরণের একটা অনুগ্রহ দেখাচ্ছি।


টিমের  সামনে এমন বাজে ভাবে অপমানিত হয়ে রতন টাটা আর স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি সাথে সাথে টিম মেম্বারদের নিয়ে মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সেই রাতেই রতন টাটা তার কার বিজনেস বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই রাতেই তিনি মুম্বাইয়ে ফিরে আসেন। 


তারপর তিনি তার সমস্ত মনোযোগ টাটা মোটরসে প্রদান করেন। রতন টাটা এবং তার টিম মেম্বারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জোরে এক সময় টাটা মোটরস সারাবিশ্বে স্বনামধন্য কোম্পানিতে পরিণত হয়। 2008 সালে টাটা মোটরস মার্কেটে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত কার কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু অপরদিকে ফোর্ড কোম্পানিকে তাদের বিকৃত গাড়ি থেকেই লভ্যাংশ উঠতেই হিমশিম খেতে হচ্ছিল।


এরপর একই বছর অর্থাৎ 2008 সালে রতন টাটা ফোর্ড কোম্পানি থেকে জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার এই দুইটি গাড়ি ক্রয়ের অফার পান।


সেই সময় এগুলি ছিল ফোর্ড কোম্পানির সবচেয়ে কম বিক্রিত গাড়ি গুলোর মধ্যে অন্যতম। এবং ফোর্ড এই দুটি গাড়ির কারণে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তখন বিল ফোর্ড  তার টিমকে সাথে নিয়ে মুম্বাই শহরে আসেন। এই মিটিংয়ে বিল ফোর্ড রতন টাটাকে বলেন এই গাড়িগুলো ক্রয় করি আপনি আমাদের জন্য বড় অনুগ্রহ প্রদর্শন করলেন। এটা শুনে রতন টাটা চাইলেই খুব সহজ এবং স্বাভাবিক ভাবেই 1999 সালে বিল ফোর্ডের করা সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি বরং তিনি সেসময় বড় মনের এবং ভালো মানসিকতার পরিচয় দেন। বর্তমানে জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার টাটা মোটরসের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত গাড়ি গুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে টাটা মোটরস সারা বিশ্বে পরিচিত এবং অন্যতম বড় এটি কার কম্পানি। আর এখন রতন টাটা বিশ্বজুড়ে সর্বজন সমাদৃত একজন ব্যবসায়ী। শুধুমাত্র তার বিশাল সাম্রাজ্য এবং ব্যবসার জন্যই নয়, তার দয়া এবং বিনয়ী আচরণের জন্য টাটা গ্রপ তাদের লাভের প্রায় 65 শতাংশ বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থায় দান করে।


ফোর্ডের সাথে রতন টাটার এই গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় যে সফলতায় সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন