Lukaku's Life Story

রমেলু  লুকাকু......
.........
প্রথমেই একটা ভুল ধারনা ভাঙ্গাই ,সেটা হল রোমেলু  লুকাকু মুসলিম প্লেয়ার না!..যদিও একটা সময়  মনে করতাম এবং ইন্টারনেটে এইটা নিয়ে
অনেক ভুয়া জিনিস ও বের হয়েছিল!
সে একজন ক্রিস্টিয়ান!

তবে আজকে লুকাকুর লাইফ স্টোরিটা অনেক ভাল লাগলো ...মানে অনেক বেশি সংগ্রাম করেছে জীবনে...।


রমেলু  লুকাকুঃ
***********************************************************************
******************আমার কিছু কথা বলার আছে….*******************
***********************************************************************

আমি এখনো ভালোভাবেই সেই দিনগুলোর কথা মনে করতে পারি যেদিন আমাদের কিছুই ছিল না। আমি এখনো ফ্রিজের সামনে আমার মায়ের মুখ স্পষ্ট মনে করতে পারি!

আমার বয়স তখন ৬ বছর ছিল। স্কুল থেকে দুপুর এর খাবার এর সময় বাসায় ফিরে আমি প্রতিদিন একই খাবার পেতাম। শুধু দুধ আর পাউরুটি। অকল্পনীয়! কিন্তু আসলে কিছুই করার ছিল না। আমাদের এর থেকে বেশি কিছুর সামর্থ্য ছিল না।

তারপর একদিন আমি স্কুল থেকে ফিরে বাসায় প্রতিদিনের মত খাবার খেতে বসে দেখি মা দুধে কি যেন মিশাচ্ছিলেন। আমি তখনো বুঝিনি কি হচ্ছে। কিন্তু একটু পরেই আমি বুঝে যাই। মা আসলে দুধে পানি মেশাচ্ছিলেন। যাতে পরিমাণটা বাড়ে।

কারন হয়ত আমাদের পুরো সপ্তাহ চলার মত অর্থ ছিল না হাতে। কারন আমরা ছিলাম অনেক গরিব। শুধু গরিব না একেবারে নিঃস্ব যাকে বলে!

আমার বাবা একজন পেশাদার ফুটবলার ছিলেন।

তিনি তার ক্যারিয়ার এর শেষের দিকে ছিলেন তাই আস্তে আস্তে আমাদের ইনকাম কমে এসেছিল। কয়েকদিনের মধ্যে বাসা থেকে ক্যাবল টিভি চলে গেলো। ওইদিন থেকেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দেখা বন্ধ হয়ে গেলো আমার। কয়েকদিন পর বিদ্যুৎ ও চলে গেল। কারন আমাদের বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার মত সামর্থ্য ছিল না। আমি গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারতাম না। মা কেটলি তে কিছু পানি গরম করে দিতেন। আমি ঝরনা এর মত করে মাথার উপর থেকে ঢালতাম।

এমন দিনও এসেছে মা আমদের জন্য বেকারি থেকে রুটি ধার রেখে কিনে আনতেন। বেকারি এর লোকজন আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে চিনতেন। তাই তারা রুটি বাকিতে দিতেন। আসলে মা যখন দুধে পানি মিশিয়েছিলেন তখনই বুঝে গিয়েছিলাম আমাদের সব কিছু শেষ।

আহা জীবন!

আমি এর পর থেকে কিছুই বলি নি। আমি আমার মাকে চিন্তায় ফেলতে চাইনি। কিন্তু হ্যা আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে কি করতে হবে!

সেদিন আমি নিজের কাছে নিজে একটি প্রতিজ্ঞা করি। সেদিন মনে হয়েছিল কেও হয়ত আমাকে থাপ্পড় দিয়ে জাগিয়ে দিয়েছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে কি করতে হবে। কারন আমি আমার মাকে সেভাবে থাকতে দেখতে পারতাম না। আমি পারি নি!

মানুষ ফুটবলের ক্ষেত্রে মানসিক শক্তি নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে। আমি মনে করি আমি অনেক বেশি শক্তিশালি মানসিক দিক দিয়ে। কারন আমি এখনো সেই দিনের কথা মনে করতে পারি যখন আমি আমার ছোট ভাই এবং মা অন্ধকার ঘরে বসে প্রার্থনা করতাম। আমরা চিন্তা করতাম, বিশ্বাস করতাম এবং জানতাম একদিন না একদিন হবেই।

একদিন স্কুল থেকে ফিরে আমি মাকে কাঁদতে দেখলাম। আমি আর পারলাম না। আমি মাকে বললাম “মা আমাদের অবস্থা পরিবর্তন হবেই। আমি আন্ডারলেখট এর হয়ে ফুটবল খেলবো। শীঘ্রই খেলবো। তুমি দেখো আমাদের আর অভাব থাকবে না। তোমাকে আর কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না”।

আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কবে আমি পেশাদার ফুটবল খেলতে পারবো।

বাবা বলেছিলেন ১৬ বছর বয়সে। কিন্তু আমি তখন মাত্র ৬।

আমি যখন খেলতাম আমি প্রত্যেকটি খেলাই ফাইনাল এর মত করেই খেলতাম! এমনকি আমি যখন পার্কে খেলতাম তখনো প্রতিটা গেম ফাইনালের মত করেই খেলতাম। কিন্ডারগার্টেন এ যখন খেলতাম ফাইনলার এর মত করেই খেলতাম।

আমি বলে সর্বশক্তি দিয়ে লাথি দিতাম। আমি বলের কভার উঠিয়ে ফেলতে চাইতাম। আমার কোনো ফিফা ছিল না। প্লে স্টেশন ছিল না যে ফাইনেস শট খেলবো। ফাইনেস শট বা অন্য কিছু আমি বুঝতাম না। আমি শুধু সব শেষ করে দিতে চাইতাম!

আমি যখন লম্বা হতে শুরু করি, আমার আশে পাশের কিছু শিক্ষক আর অভিভাবক আমাকে খুবই অস্বস্তিতে ফেলতেন! তারা আমাকে জিজ্ঞেস করতেন আমার বয়স কত! আমি কোথা থেকে এসেছি! যখন আমি লিয়েখ এর যুবদলের হয়ে খেলতে নামতাম একজন অভিভাবক আমাকে একরকম আটকে দিলেন। তার ভাব এরকম ছিল যেন এই ছেলে কে? তার আইডি কোথায়? সে কোথা থেকে এসেছে?

আমি ভাবতাম আমার জন্ম আন্টভের্প এ। আমি একজন বেলজিয়ান!

আমার বাবা আমার এওয়ে ম্যাচ গুলোতে যেতে পারতেন না। কারন তাদের কোনো গাড়ি ছিল না। আমি সম্পূর্ণ একা ছিলাম। আমাকে নিজের জন্যই উঠে দাড়াতে হতো। আমি ব্যাগ থেকে আমার আইডি বের করতাম আর অভিভাবকদের কাছে দিতে দিতে ভাবতাম, ‘আমিতো আপনার ছেলেকে আজ এমনিতেও খুন করতাম। এখন শুধু খুন নয় আপনার ছেলে কে শেষ করে দিব। আজকে আপনার ছেলেকে কাদতে কাদতে বাড়ি নিয়ে জেতে হবে।’ আমার রক্তে তখন এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করতো!

আমাদের বাসায় ইঁদুরগুলোর উপর আমার রাগ ছিলো। রাগ ছিলো চ্যাম্পিয়নস লিগ না দেখতে পারার অক্ষমতার জন্য। রাগ ছিলো অন্য অভিভাবকরা আমার দিকে অন্য নজরে দেখতেন বলে।

আমি একটি মিশনে নেমেছিলাম। আমার বয়স যখন মাত্র ১২ তখন আমি ৩৪ ম্যাচে ৭৬ টি গোল করেছিলাম এবং সব গুলোই করেছিলাম আমার বাবার জুতো পরে। কারন আমাদের দুজনেরই পায়ের মাপ ছিলো একই।

একদিন আমি আমার নানাকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি ছিলেন আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ। এবং আমাদের কংগোতে যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন। যে কংগো থেকে আমার বাবা মা এসেছেন!

একদিন তার সাথে কথা বলার সময় তাকে আমি বললাম, ‘হ্যা আমি ভালো আছি। আমি ৩৪ ম্যাচে ৭৬ গোল করেছি। আমরা লিগ জিতেছি, বড় বড় দল গুলো আমাকে নজরে রাখছে!’। তিনি বললেন, ‘খুবই ভালো। তুমি অনেক ভালো করেছ। কিন্তু তুমি কি একটি কাজ করতে পারবে?’।

আমার নানা সব সময় আমার খেলা নিয়ে জিজ্ঞেস করতেন কিন্তু সেদিন তিনি একটু অন্যরকম ছিলেন। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম হ্যা বলো আমি করতে পারি? তিনি বললেন তুমি আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করো যে তুমি আমার মেয়েকে দেখে রাখবে! আমি বললাম হ্যা অবশ্যই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম। কিন্তু আমি তখনও বুঝিনি তিনি কি চেয়েছিলেন! ঠিক ৫ দিন পর আমার নানা মারা যান। আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম আসলে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছিলেন!

এটি ভেবে আমি অনেক কষ্ট পেতাম যে তিনি যদি আর ৪ টি বছর বেচে থাকতেন, তিনি হয়ত আমাকে আন্ডারলেখট এর হয়ে খেলতে দেখতে পেতেন! তাকে আমি দেখাতে পারতাম যে আমরা ভালো আছি। আমি তার কাছে করা প্রতিজ্ঞা রেখেছি!

মে ২৪,২০০৯।

আন্ডারলেখট আর লেইখ এর মধ্যেকার ফাইনাল ম্যাচ। দিনটি আমার জন্য অন্যতম উত্তেজনাকর একটি দিন ছিল। কিন্তু আমাকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। আন্ডারলেখট এর অনুর্ধ ১৯ দলের হয়ে খুব বেশি একটা খেলার সুযোগ আমাকে দেওয়া হতো না। আমি জানতাম যদি এইভাবে চলতে থাকে তবে আমি কোনভাবেই আমার ১৬ তম জন্মদিনের মধ্যে আন্ডারলেখট এর মূল দলের হয়ে চুক্তি সাক্ষর করতে পারবো না। তাই আমি কোচের সাথে বাজি ধরলাম। তাকে গিয়ে বললাম তিনি যদি আমাকে নিয়মিত খেলার সুযোগ দেন তবে আমি তাকে একটা জিনিস এর গ্যারান্টি দিতে পারি। আমি তাকে বললাম আমি ডিসেম্বর এর মধ্যেই ২৫ গোল করবো। কোচ আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। তিনি বললেন যদি তুমি না করতে পারো তবে তুমি আবারও বেঞ্চে যাবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিন্তু আপনাকেও একটি প্রতিজ্ঞা করতে হবে। যদি আমি ২৫ গোল করে ফেলতে পারি আপনাকে আমাদের বাড়ি যাওয়ার মিনি ভ্যানগুলো পরিষ্কার করতে হবে! শুধু তাই না এর পর আপনাকে আমাদের জন্য নিয়মিত প্যানকেক বানাতে হবে। তিনি বললেন ঠিক আছে।

এবং আমি ২৫ গোল করে বসি নভেম্বর এর মধ্যেই। আর ক্রিসমাস এর আগেই প্যান কেক খাচ্ছিলাম। এটা থেকে একটা শিক্ষা আপনি পাবেন অবশ্যই যে, একজন ক্ষুধার্ত বালকের সাথে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো না।

১৩ মে আমার জন্মদিনে আমি আন্ডারলেখট এর সাথে প্রোফেশনাল কন্ট্রাক্ট সাক্ষর করি। এরপরই আমি ফিফা কিনে বাসায় নিয়ে যাই। যেহেতু সিজনের শেষ তাই আমি বাসায় বসেই আরাম করছিলাম। সেবার বেলজিয়ান লিগ অনেক জমে উঠেছিল। কারন সেবার আন্ডারলেখট আর স্টান্ডার্ড লেইখ সমান পয়েন্ট পেয়ে লিগ শেষ করেছিল। তাই দ্বিতীয় লেগে আরেকটি ম্যাচ হবে নির্ধারণ করতো যে কে শিরোপা বিজয়ী হবে।

প্রথম লেগে আমি বাসায় বসে দর্শক হয়ে খেলা দেখেছিলাম। কিন্তু ২য় লেগের আগেই আমাদের সংরক্ষিত খেলোয়ারদের মধ্যে থেকে কোচের কাছ থেকে একটি কল পাই। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কি করছো! আমি বললাম আমি পার্কে যাচ্ছি খেলতে।

তিনি বললেন না না না………

তুমি এখনই তোমার ব্যাগ গুছাও। আমি বললাম কেনো আমি কি করেছি। তিনি বললেন তুমি আন্ডারলেখট আসছো। তোমার দল তোমাকে চেয়েছে। আমি অনেক বেশি অবাক হয়েছিলাম যে আন্ডারলেখট এর মুল দল আমাকে চেয়েছে!

আমি দৌড়ে বাবার রুমে গিয়ে বাবাকে ঘুম থেকে টেনে তুললাম আর বললাম চলো আমাদের যেতে হবে!

তিনি বললেন, কোথায়?

“আন্ডারলেখট”

স্টেডিয়ামে প্রবেশ এর দিনটি আমি কখনোই ভুলবো না। আমি তড়িঘড়ি করে ড্রেসিং রুমে গেলাম। কিটম্যানকে বললাম আমার জার্সি দিন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কত নম্বর জার্সি চাও? আমি বললাম ১০ নং জার্সি টাই দিন। “একাডেমি এর খেলোয়াড় দের কে ৩০ এর উপর সংখ্যা নিতে হবে” কিট ম্যান বললেন।

আমি বললাম আচ্ছা ভালো। আমি চিন্তা করলাম ৩+৬ মানে ৯, এটি একটি ভালো সংখ্যা। তাহলে আমাকে ৩৬ নং জার্সিটিই দিন।

রাতের খাবার এর আগে সিনিয়র খেলোয়াররা আমাকে একটি গান লিখে দিয়েছিলেন। আমার ঠিক মনে নেই কি ছিলো সেটা কারণ আমার মাথা ঘুরছিলো।

ওইদিকে আমি চলের আসার পরেরদিন আমার বন্ধুরা বাসায় গিয়ে খুজেছে আমাকে খেলতে যাওয়ার জন্য। মা তাদের বলে দিয়েছেন যে আমি ফাইনাল খেলতে চলে গিয়েছি।

পরের দিন আমরা যখন বাস থেকে স্টেডিয়ামের সামনে নামলাম সবাইকে দেখলাম সুন্দর দামি স্যুট পরে আছে। শুধু মাত্র আমি বাদে। আমি পরেছিলাম একটা বাজে ট্র‍্যাক স্যুট। একটু পরেই টিভি ক্যামেরাগুলো আমার সামনে চলে আসে।

যখনই আমি লকাররুমে ঢুকি আমার ফোন বেজে উঠতে লাগলো। আমি ৩ মিনিটে সেদিন ২৫ টি মেসেজ পেয়েছিলাম। সবারই একই প্রশ্ন, তারা আমাকে টিভিতে দেখেছে। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব। আমি কি করছি এখানে!

আমার পক্ষে সবাইকে উত্তর দেওয়া সম্ভব ছিল না। আমি শুধু আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুকে তার মেসেজ এর উত্তরে বলেছিলাম, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। টিভিতে দেখতে থাকো কি হয় এরপর!

৬৩ মিনিটে কোচ আমাকে বদলি খেলোয়ার হিসেবে মাঠে নামালেন! আমি ১৬ বছর ১১ দিন বয়সে আন্ডারলেখট এর জন্য সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু করলাম! হয়ত সেদিন হেরে গিয়েছিলাম আমরা কিন্তু এটা ভেবে আমার স্বর্গীয় শান্তি অনুভব করছিলাম যে আমার করার প্রতিজ্ঞা আমি রাখতে পেরেছিলাম। সেই মূহুর্তে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে!

পরের মৌসুমে একই সাথে আমি আমার স্কুলের শেষ দিন গুলো কাটাচ্ছিলাম আর ইউরোপা লিগেও খেলছিলাম। আমরা অনেক বড় পয়েন্ট ব্যবধানে লিগ জিতেছি সেবার। আর দ্বিতীয় আফ্রিকান প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার হিসেবে মৌসুম শেষ করেছিলাম! সেই অনুভুতিগুলো ভাষায় প্রকাশ মত ছিলো না!

আমি যেসব চেয়েছিলাম সবই হচ্ছিল। কিন্তু আমি এসব কিছু এত দ্রুত হবে ভাবিনি। গনমাধ্যমগুলো আমাকে নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখালো। সেসব আমার উপর আরও বাড়তি চাপ এনে দিলো। আমি জাতীয় দলের হয়ে তেমন কিছুই করতে পারছিলাম না। কিছুই ঠিক মত হচ্ছিল না।

আমি খবরের কাগজ এ পড়তাম আমি যদি ভালো খেলি তারা আমাকে রোমেলু লুকাকু, বেলজিয়ান স্ট্রাইকার বলে আক্ষায়িত করছে!

আবার যদি খারাপ খেলি তারা আমাকে রোমেলু লুকাকু, কংগোলিজ স্ট্রাইকার বলে উপহাস করছে!

আপনি যদি আমার খেলার ধরন পছন্দ না করেন কোনো সমস্যা নেই। আমি এইখানে জন্ম নিয়েছি। আমি এই আন্টভের্প, লেইখ, ব্রাসেলসে বড় হয়েছি। আমি আন্ডারলেখট এ খেলার স্বপ্ন দেখেছি! আমি একজন ভিনসেন্ট কোম্পানি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি! আমি যদি ফ্রেঞ্চে বাক্য শুরু করি আমি সেটা ডাচে শেষ করবো। এছাড়াও আমার প্রতিবেশির প্রয়োজনে কিছুটা স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ভাষাও বলতে পারবো।

আমি একজন বেলজিয়ান। আমরা সবাই বেলজিয়ান! এটিই আমাদের সবচেয়ে সুন্দর করে তোলে! তাই নয় কি?

আমি জানি না কেনো আমার নিজের দেশের কিছু মানুষ আমার ব্যর্থতা দেখতে পছন্দ করতো! তারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। যখন আমি চেলসিতে আসি তখনও কিছু সমর্থক হাসতো। যখন লোনে ওয়েস্টব্রমে যাই সেখানেও তারা হাসাহাসি করতো!

কিন্তু একটা বিষয় ঠিক আছে। এই মানুষগুলো তখন ছিল না যখন আমরা দুধে পানি মিশাতাম।

আর আপনি যদি আমার দুঃসময় এ না থাকেন আপনি আমাকে চিনতে পারবেন না।

মজার বিষয় কি জানেন! আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ১০ বছর আমি চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলা দেখি নি। কারন আমাদের সামর্থ্যই ছিলো না তখন। অথচ আমি যখন স্কুলে যেতাম তখন বাচ্চারা ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে বলাবলি করতো। আমার কোনো ধারণাই থাকতো না তারা কি নিয়ে কথা বলছে। ২০০২ এ যখন মাদ্রিদ লেভারকুসেন এর সাথে ফাইনাল খেললো সবাই বলাবলি করছিলো “সেই ভলি, ওহ মাই গড সেই ভলি!” আর আমাকে তখন ভান করে থাকতে হতো যেন আমি সব জানি!

দুই সপ্তাহ পরে আমার এক বন্ধু কম্পিউটার ল্যাব ক্লাসে ভিডিওটি ডাউনলোড করে দেখায়

আর শেষ পর্জন্ত জিদানের সেই বাম পায়ের টপ কর্ণারের ভলিটি দেখতে পেরেছিলাম।

সেবার গ্রীষ্মে আমি আমার বন্ধুর বাড়িতে রোনাল্ডো ফেনোমেনোনের ফাইনাল খেলা দেখতে পেরেছিলাম। বাদ বাকি পুরো টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলোর ঘটনা আমি বন্ধুদের মুখেই শুনেছিলাম।

হ্যা ২০০২ এ আমার জুতোর বড় ছিদ্রটির কথাও আমার বেশ মনে আছে!

এর ১২ বছর পর আমি প্রথম বিশ্বকাপ খেলি। এবার আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে জাচ্ছি। এবারের বিশ্বকাপটা অনেক মজা হবে!

আর জীবনটা একটা নাটক। মানুষ আমাকে আর আমার দল কে নিয়ে যা ইচ্ছা বলতে পারে!

আমি যখন ছোট ছিলাম আমাদের থিয়েরি অঁরির ম্যাচ টিভিতে দেখার সামর্থ্যও ছিলো না। আর এখন আমি জাতীয় দলের হয়ে প্রতিদিনই তাঁর কাছ থেকে শিখছি। আমি একজন কিংবদন্তির সাথে কাজ করছি এবং তিনি আমাকে শিখাচ্ছেন কিভাবে ফাঁকা জায়গায় পেলে দৌঁড়াতে হয়। ঠিক তিনি যেমনভাবে দৌঁড়াতেন। থিয়েরিই সম্ভবত একমাত্র লোক যে আমার চেয়েও বেশি ফুটবল দেখে। আমরা সব কিছু নিয়েই তর্ক করি। আমরা একসাথে বসে জার্মানির দ্বিতীয় বিভাগের ফুটবল নিয়ে কথা বলি।

আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, থিয়েরি? আপনি কি ফরচুনা ডসেলডুর্ফ এর কাঠামোটি দেখেছেন?

তিনি অবাক হয়ে বলেছিলেন, পাগল হয়েছো নাকি? অবশ্যই দেখেছি আমি!

এটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি দারুন লাগে! আজ যদি আমার নানা আজ থাকতেন! তিনি এসব দেখতেন!

না আমি প্রিমিয়ার লিগের কথা বলছি না! আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর কথাও বলছি না! আমি চ্যাম্পিয়নস লিগের কথা বলছি না! আমি এমনকি বিশ্বকাপের কথাও বলছি না!

আমি শুধু তাকে জানাতে চাই আমাদের বর্তমান জীবন সম্পর্কে। আমি তাকে বলতে চাই দেখো তোমার মেয়ে এখন কত ভালো আছে! এখন আর বাসায় ইঁদুর নেই! আমাদেরকে এখন মেঝেতে শুতে হয় না! আর কোনো চিন্তা নেই আমাদের! আমরা এখন অনেক ভালো আছি, অনেক বেশি ভালো আছি!

আর হ্যা, এখন আর তাদেরকে পরিচয়পত্র দেখতে হয়না। সবাই আমাদের নাম জানেন!