Knowledge is Power 😎

তাইওয়ান কি স্বাধীন দেশ? নাকি তাইওয়ান চীনের অংশ? | Bengali Gossip 24

কোন মন্তব্য নেই

 

তাইওয়ান কি স্বাধীন দেশ? নাকি তাইওয়ান চীনের অংশ?


তাইওয়ান হল একটি দ্বীপ যা চীনের মূল ভূখন্ডের পূর্ব উপকূলের পূর্ব চীন সাগরে অবস্থিত। এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি অংশ । তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে তাইওয়ান প্রণালী। একটি রাজনৈতিক ইউনিট হিসাবে তাইওয়ান হলো তাইওয়ানের প্রধান দ্বীপ এবং মূল দ্বীপের পশ্চিম এবং দক্ষিণে অবস্থিত কয়েকটি ছোট দ্বীপ।


তাইওয়ানের পূর্বে জাপানের দক্ষিণতম কিছু দ্বীপ অবস্থিত। এর দক্ষিণে বাটানেস দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে, যা ফিলিপাইনের অন্তর্গত। তাইওয়ানের কিছু দ্বীপ চীনের মূল ভূখণ্ডের ফুজিয়ান প্রদেশের উপকূলের কাছাকাছি অবস্থিত।


তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেই শহর। এটি দ্বীপের উত্তর উপকূলের কাছে অবস্থিত। শহরটিতে প্রায় 78 লক্ষ জনগণ বসবাস করে। এটি তাইওয়ানের সবচেয়ে জনবহুল শহর।


তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক তাইওয়ান কি একটি দেশ? নাকি এটি চীনের অংশ? 


সোজা কথা বলতে গেলে তাইওয়ান চীনের কোনো অংশ নয়। তাদের নিজস্ব পতাকা, সরকার এবং সামরিক বাহিনী রয়েছে। সুতরাং, তাইওয়ান একটি প্রকৃত স্বাধীন দেশ। কিন্তু সেখানে একটু কনফ্লিক্ট রয়েছে। তাইওয়ানের সরকারী নাম কিন্তু তাইওয়ান নয়। তাইওয়ান এর আনুষ্ঠানিক নাম হল রিপাবলিক অফ চায়না। 


চীনের বাকি অংশ থেকে তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতার গল্প শুরু হয় 1949 সালে, যখন চীনা কমিউনিস্টরা গৃহযুদ্ধে জাতীয়তাবাদীদের পরাজিত করে । চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদীরা তাইওয়ান দ্বীপে চলে আসে এবং সেখানে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার প্রতিষ্ঠা করে। এই ঘটনার পর থেকে তাইওয়ান একটি প্রকৃত স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠে  যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেনি। 


বেইজিং-এর চীনা সরকার জোর দিয়ে বলেছে শুধুমাত্র চীনের মধ্যেই তাইওয়ান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, চীন বারবার বলেছে যে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে এবং চীনের বাকি অংশের সাথে এটিকে একীভূত করার জন্য। চীন সরকারের চাপে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই দেশই তাইওয়ানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।



তাইওয়ান পূর্বে জাতিসংঘের সদস্য ছিল এবং অনেক দেশ বেইজিংয়ের কমিউনিস্ট সরকারের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে পছন্দ করত। কিন্তু 1971 সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করে উল্লেখ করে যে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকার,,, জাতিসংঘে চীনের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি। এইভাবেই তাইওয়ানকে কার্যকরভাবে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। 


1979 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো বেইজিংয়ে চীনা সরকারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। কমিউনিস্ট চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের শর্তের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। অবশেষে, বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আজ, মাত্র পনেরটি দেশ তাইওয়ানের সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং কোনো দেশের সরকারই চীন ও তাইওয়ানের সাথে একসাথে সম্পর্ক বজায় রাখে না।


তাইওয়ান অবশ্য একটি নির্দিষ্ট স্তরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখে। এটি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এশিয়া-প্যাসিফিক কো-অপারেশন ফোরাম এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন এর মতো 40টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য। যদিও 1979 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে তবে এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোপনে এই দ্বীপের সাথে কিছু সম্পর্ক বজায় রাখে। যেমন তাইওয়ানকে যথেষ্ট সামরিক সহায়তা প্রদান করে।


যখন তাইওয়ান কার্যকরভাবে চীনের বাকি অংশ থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন তাইওয়ান একটি একদলীয় রাষ্ট্র ছিল। তাইওয়ানের একমাত্র আইনী দল ছিল জাতীয়তাবাদী দল। কিন্তু আজ তাইওয়ান অনেকগুলি দল রয়েছে। তাইওয়ানের ভোটাররা সরাসরি চার বছরের জন্য একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। 


তাইওয়ানে প্রায় 2 কোটি 36 লক্ষ মানুষ বসবাস করে। যাদের অধিকাংশই শহুরে এলাকায় বাস করে। জাতিগত দিক দিয়ে তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যার প্রায় 98 শতাংশ হান চাইনিস। তাদের দুটি দলে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হল হোক্লো হান চাইনিজ, যারা 19 শতকে জাপানিরা দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে মূল ভূখণ্ড চীন থেকে তাইওয়ানে চলে আসে। হোক্কিয়েন উপভাষা, যা হোক্লো হান চীনাদের স্থানীয় উপভাষা। দ্বিতীয় হান চাইনিজ গ্রুপ হল হাক্কা হান চাইনিজ। তাইওয়ানের জনসংখ্যার প্রায় 14 শতাংশ হাক্কা হান চাইনিজ জনগণ রয়েছে। মূল ভূখণ্ডের চীনারা, যারা জাতীয়তাবাদী গৃহযুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর তাইওয়ানে চলে আসে,,,, তারা রয়েছে প্রায় 14 শতাংশ। আর তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যার বাকি 2 শতাংশ তাইওয়ান আদিবাসী রয়েছে। ম্যান্ডারিন চাইনিজ তাইওয়ানের সরকারী ভাষা এবং দ্বীপের প্রায় সমস্ত মানুষই এই ভাষায় কথা বলে। ধর্মের পরিপ্রেক্ষিতে তাইওয়ানে 26টি সরকারীভাবে স্বীকৃত ধর্ম রয়েছে। যদিও দ্বীপের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয় না।


তাইপেই ছাড়াও অন্যান্য বড় শহরগুলির মধ্যে রয়েছে কাওশিউং এবং তাইচুং। সেখানে যথাক্রমে প্রায় 15 লক্ষ এবং 10 লক্ষ মানুষ বসবাস করে।


তাইওয়ানের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য তাইওয়ান কে এশিয়ান টাইগার বলা হয়। যার অর্থনীতি অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। 1950-এর দশকে, তাইওয়ানের অর্থনীতি আমেরিকান সাহায্যের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। 1950 এর দশকের শেষের দিকে, দ্বীপের অর্থনীতি দ্রুত প্রসারিত হতে শুরু করে। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তাইওয়ানের অর্থনীতি এক অন্য পর্যায়ে চলে যায়। তাইওয়ান দ্বীপ টি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনেক অনুকূল। সেখানে শ্রমের খরচ খুব সস্তা। যেই কারণে দ্রব্য উৎপাদনে খরচ কম এবং লাভ বেশি হয়। 


আজ, তাইওয়ানের অর্থনীতি একটি উন্নতশীল দেশের মতো। করোনা মহামারীর কারণে যেখানে জাপান, হংকং এবং সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি 2020 সালে 5 শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, সেখানে তাইওয়ানের 3 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।


তো এই ছিল তাইওয়ান সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন