Knowledge is Power 😎

ত্রিপুরা রাজ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য | Bengali Gossip 24

কোন মন্তব্য নেই

ত্রিপুরা রাজ্য সম্পর্কে আজনা তথ্য

ত্রিপুরা রাজ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য | Bengali Gossip 24


ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য গুলির সেভেন সিস্টার স্টেট এর মধ্যে একটি সুন্দর রাজ্য হলো ত্রিপুরা। আয়তনে বেশি বড় নয় কিন্তু প্রাচীন মন্দির এবং বহু পার্বত্য অঞ্চল রয়েছে। মা ত্রিপুরা সুন্দরীর নাম অনুসারে এই রাজ্যের নাম ত্রিপুরা রাখা হয়েছে। একসময় ত্রিপুরা রাজবংশএই অঞ্চল শাসন করতো। যা ভারতের স্বাধীনতা পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের অধীনস্থ একটি রাজ্য ছিল। তারপর 1971 সালে নর্থ ইস্টার্ন এরিয়া রিঅরগানাইজেশন এক্ট অনুযায়ী অঞ্চলটি ত্রিপুরা নামে একটি পূর্ন রাজ্যের অধিকার পায়।  শিক্ষাগত দিক দিয়ে ভারতের অন্যতম শিক্ষিত রাজ্য হিসেবে পরিচিত ত্রিপুরা। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা। যা উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।বর্তমানে মুম্বাই এবং চেন্নাইয়ের পর ভারতের তৃতীয় আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে আগরতলা। বর্তমান ভারত সরকারের স্মার্ট সিটি মিশন অনুযায়ী এই শহরটিকে স্মার্ট সিটি বানানোর পরিকল্পনা চলছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ রাজ্যে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে। তো চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক এই ছোট্ট রাজ্যে আর কি কি রয়েছে?

(Unknown Things about Tripura)


আয়তনে ভারতের ছোট রাজ্যের মধ্যে গণ্য হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানুষের ব্যবহার মন কাড়ার মতো। বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যে স্থানীয় বাঙালি এবং ত্রিপুরী মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে মিলে মিশে আছে। তাই বাংলা ভাষার পাশাপাশি ককবরক ভাষারও চলন রয়েছে। রাজ্যের জনসংখ্যা 36 লক্ষ 71 হাজার 32 জন। এবং 2011 অনুযায়ী ত্রিপুরা রাজ্যে 65.73 শতাংশ বাঙালি, 25.9 শতাংশ ত্রিপুরী,  2.3 শতাংশ চাকমা এবং হিন্দিভাষী 1.5 শতাংশ মানুষ আছেন। উত্তর-পূর্ব ভারতে অসমের পর দ্বিতীয় জনবহুল রাজ্য হলো ত্রিপুরা। তাই একদিকে বাঙালীদের সেরা উৎসব দুর্গাপূজা যেমন পালিত হচ্ছে তেমনি ত্রিপুরী এবং জমাতিয়া মানুষেরা গরিয়া উৎসব পালন করে। 


নাচ-গানে ত্রিপুরার মানুষ ভারত তথা সারা বিশ্বে নাম করেছে। ত্রিপুরার মহারাজ মহারাজা ঈশান চন্দ্র মানিক্যর দুই পুত্র ভারতের সঙ্গীত জগতের দুই বিখ্যাত নাম। একজন সেতার বাদক নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মন এবং অপরজন সবার পরিচিত এস ডি বর্মন। বিখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মনের পিতা ছিলেন এস ডি বর্মন। এবার বলুন তো হস্তশিল্প কার না ভালো লাগে! সবারই মন চায় হাতের তৈরি জিনিসপত্র বাড়িতে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার। তার জন্য রয়েছে ত্রিপুরা। বাস এবং বেতের হস্তশিল্প এবং ত্রিপুরার গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি নানা ধরনের মূর্তিগুলো এই রাজ্যে অনায়াসে পেয়ে যাবেন। তাই বলা হয় হস্তশিল্প, সঙ্গীত এবং নাচ এগুলি ত্রিপুরার সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। 


বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশে পরিণত হবার পর পশ্চিমবাংলা থেকে ত্রিপুরার যে দূরত্ব কয়েকশো কিলোমিটার ছিল তা বেড়ে গিয়ে 1500 কিলোমিটারের বেশি হয়ে যায়। ভারতের  অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে ত্রিপুরাকে যুক্ত করা প্রধান সড়ক পথ ন্যাশনাল হাইওয়ে 8। যাকে ত্রিপুরার জীবনরেখাও অনেক সময় বলা হয়। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সাথে ব্রডগেজ রেল লাইনের মারফত 2016 সালে ত্রিপুরা আরো পাকাপাকি ভাবে আরো বেশিভাবে যুক্ত হয়। রাজ্যে আগে থেকেই চালিত পুরনো রেল পথের পুনর্বিন্যাস' এবং নতুন রেলপথ চালুর প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমান ভারত সরকার এবং ত্রিপুরা সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের আখাউড়া জংশনের সাথে ত্রিপুরা রেলপথের যুক্ত হচ্ছে। যার ফলে বর্তমান  কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব 1000 কিলোমিটার পর্যন্ত কম হয়ে যাবে। এছাড়া ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বিমান পথেও ত্রিপুরা যুক্ত। সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্যস্ততম এবং আসামের লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরের পর দ্বিতীয় বৃহৎ বিমানবন্দর ত্রিপুরার মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দর। যাকে আগরতলা বিমানবন্দরও বলা হয়। বর্তমানে এয়ারপোর্ট অথোরিটি অফ ইন্ডিয়া এই বিমানবন্দরের প্রসারণ এর কাজ করছে। যার ফলে কিছু বছরের মধ্যেই আগরতলা বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত হবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ঢাকা, সিলেট এবং চট্টগ্রাম এর সাথে যুক্ত হতে পারবে। যদিও ঢাকার সাথে আগরতলা বাস চলাচলের মাধ্যমে আগে থেকেই যুক্ত।


ত্রিপুরার তিন দিকেই রয়েছে বাংলাদেশ। উত্তর-পূর্বে রয়েছে আসাম এবং পূর্বে মিজোরাম। সমগ্র ভারতের তৃতীয় সবথেকে ছোট রাজ্য হলো ত্রিপুরা। ত্রিপুরার মোট আয়তন 10491.69 বর্গকিলোমিটার। এতো ছোট আয়তন এবং সঠিক যোগাযোগের সমস্যা থাকা সত্বেও ত্রিপুরা রাজ্যে শিক্ষিতের হার শুনলে চমকে উঠতে হয়। এ রাজ্যে 2013 অনুযায়ী 94.65 শতাংশ জনসংখ্যা শিক্ষিত। যাইহোক সমস্ত রকম বাধা বিপত্তি কাটিয়েও রাজ্যের মানুষ শিক্ষাকে মেরুদন্ড হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যার জন্য ত্রিপুরার বহু মানুষ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। 


উত্তর-পূর্ব রাজ্যের পাহাড় এবং পার্বত্য অঞ্চল রয়েছে যেগুলো দেখতে সর্বদাই মানুষ উৎসুক হয়ে থাকে। ভ্রমণ বিলাসী মানুষদের জন্য ত্রিপুরার মনোরম প্রকৃতি সর্বদা প্রস্তুত। ত্রিপুরার একটি দর্শনীয় স্থান হলো ঊনকোটি। বড়ো বড়ো পাহাড়ে খোদাই করে শিব ঠাকুরের যে সমস্ত মূর্তি করা হয়েছে তা দেখলেই হতবাক হয়ে যেতে হয়। কিভাবে এবং কখন এরূপ খোদাই করা সম্ভব হয়েছে তা ভাবলেও অবাক লাগে। এক কথায় অসাধারণ এই স্থান। এমনকি পাথরগুলোর গায়ে গণেশ ঠাকুর, মা দূর্গা, শিব ঠাকুরের বাহন মূর্তি দেখা যায়। প্রতিবছর এপ্রিল মাসে সেখানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফলে সাধারণ অবস্থায় সেখানে যেরূপ পর্যটক আসে তার থেকেও বেশি পর্যটক মেলার সময় আসে। বর্তমানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া অনুযায়ী এই স্থানটিকে হ্যারিতেজের তকমা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টায় ঊনকোটির উন্নতি সাধনের চেষ্টা চলছে এবং এই রকম আরেকটি পর্যটন কেন্দ্র দেবতামুরাও রয়েছে। সত্যি বলতে কি দারুন জায়গা পরিপূর্ণ রাজ্য ত্রিপুরা। 


ত্রিপুরা রাজ্যে রাজ বংশের শাসন থাকায় অসাধারণ রাজমহল রয়েছে। তাদের মধ্যে উজ্জয়ন্ত প্যালেস এবং নীরমহল অন্যতম। একসময় মানিক্য রাজ বংশের বাড়ি ছিল উজ্জয়ন্ত প্যালেস। যাকে ত্রিপুরা সরকার কিনে নেয় এবং একসময় রাজ প্রাসাদটি ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা ছিল  বর্তমানে এখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের তথা রাজ্যের নানান ধরনের পাথরের মূর্তি ও মানিক্য রাজ বংশের বিভিন্ন স্মৃতির সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন শিল্পকলা রয়েছে। তাই রাজ প্রাসাদটি এখন রাজ্যের মিউজিয়াম। আপনার যদি উত্তর পূর্ব ভারতের শিল্প কলা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করে তাহলে মিউজিয়াম ঘুরে আসতে পারেন। 


মা কালীর দারুন মন্দির কমলাসাগর কালীমন্দির। কমলা সাগরের লেকটি এই মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। রাজ্যটি আয়তনে ছোট কিন্তু সমগ্র রাজ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পরিপূর্ণ রয়েছে। এই রাজ্যের অন্তর্গত জঙ্গলের আয়তন 566.93 বর্গকিলোমিটার। ত্রিপুরার সিপাহিজলা অভয়ারণ্যে মেঘলা চিতা দেখা যায়। এছাড়া ত্রিপুরার তৃস্না অভয়ারণ্য বাইসনের জন্য বিখ্যাত।


ত্রিপুরার অর্থনীতির মূল অংশ চাষাবাদ, চা শিল্প এবং সার্ভিস সেক্টরের উপরে নির্ভরশীল। এছাড়া ব্যাপক পরিমানে রাবার চাষ, মাছ চাষ করা হয়। ওএনজিসি র দ্বারা এই রাজ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।


সবশেষে, বলতে হয় শুঁটকি মাছের নাম শুনেছেন? ত্রিপুরা রাজ্যে শুঁটকি মাছ খুবই জনপ্রিয়। যদি কোনো ত্রিপুরা রাজ্যে বেড়াতে যান তবে অবশ্যই একবার এই শুঁটকি মাছ ট্রাই করে দেখবেন। 


তো এই ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর ত্রিপুরা রাজ্য সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন