Knowledge is Power 😎

আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) সম্পর্কে কিছু গোপন তথ্য জেনে নিন

1 টি মন্তব্য
আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে কিছু গোপন তথ্য

আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে কিছু গোপন তথ্য জেনে নিন

ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে প্রিয়তম জায়গাগুলোর মধ্যে একটি হলো প্যারিস শহর। অনেকেই তাই মনে করেন খুব ভাগ্যবান মানুষ হলে নাকি প্যারিস শহরে কেউ যেতে পারে। কিন্তু প্যারিসের বিখ্যাত হওয়ার পিছনে যে কথাটি জড়িত আছে তা হলো আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ার প্যারিস শহরের চ্যাম্প ডে মাস শহরে অবস্থিত। 

সাধারণত আইফেল টাওয়ারের নির্মাণে কৃতিত্ব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার গুসতাভে আইফেল কে দেওয়া হয়। কিন্তু আসলে মরিস কোচলিন এবং এমিলে নৌগুয়ের কে এই টাওয়ার নির্মাণের সৃষ্টিকর্তা বলা হয়ে থাকে। টাওয়ার টি 1889 সালে বিশ্ব মেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের সময় এটিকে সাময়িক গঠন হিসাবে তৈরি করা হয় কিন্তু পরবর্তীকালে বেতার মাধ্যম ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকলে ধ্বংসের চিন্তা বাতিল করা। তবে জানেন কি, পৃথিবীতে টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পরিদর্শনকারী স্থান গুলির মধ্যে আইফেল টাওয়ার সবথেকে বেশি পর্যটক আকৃষ্ট করে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে কিছু গোপন তথ্য যা হয়তো আপনার অজানা। 

গুস্তাভে আইফেল প্রথমে স্পেনে টাওয়ারটি নির্মাণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এত বিশাল নির্মাণকে অদ্ভুত ভেবে স্পেন সরকার প্রত্যাখ্যান করে দেন। পরবর্তীকালে প্যারিসে নির্মাণকার্য চলতে থাকলে স্থানীয় মানুষ এ বিশাল কালো রঙের নির্মাণকে অশুভ হলে বিরোধিতাও করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এই আইফেল টাওয়ার ফ্রান্সে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।


1889 সালে ফ্রেঞ্চ রেভ্যুলেশন এর শতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশ্ব মেলার আয়োজন করা হয় এবং তার প্রবেশদ্বার হিসেবে এই টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়। টাওয়ার টি প্রায় 10 হাজার টন ওজনের এবং পুরোটাই লোহা দিয়ে তৈরি। এই বিশাল লৌহ নির্মাণ কে মরিচার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রত্যেক সাত বছর অন্তর অন্তর পঞ্চাশটি টন রং করা হয় এবং এই রং পুরোপুরি স্থানীয় সংস্কৃতি রীতি মেনে হয় এবং তা হাতেই করা হয়। এখনো পর্যন্ত 18 বার রং করা হয়েছে।


1940 সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন জার্মানি প্যারিস শহর দখল করে নেয় তখন ফ্রান্সের মানুষ আইফেল টাওয়ারের লিফটের কেবেল টা কেটে দেন। যাতে হিটলারের সেনা তাদের নাজি পতাকা আইফেল টাওয়ারের উপরে না লাগাতে পারে। 


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শেষ কালে যখন জার্মানি যুদ্ধের হারার মুখে এসে দাঁড়ায় তখন এডলফ হিটলার আইফেল টাওয়ার সহ প্যারিস শহরের সমস্ত কিছু ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। কিন্তু হিটলারের এক সেনানায়ক তার আদেশ অগ্রাহ্য করেন এবং তার ফলস্বরূপ টাওয়ারটি আজ ফ্রান্সের ঐতিহ্য দাঁড়িয়ে আছে। এই বিশাল নির্মাণ টি যদি উপরে উঠে উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে 1665 ধাপ সিড়ি চেপে উঠতে হবে। প্রথম এবং দ্বিতীয় তলা লিফট এবং সিড়ি দুইভাবেই যাওয়া যায়, কিন্তু তৃতীয় তলা উঠতে লিফটের ব্যবহার করতেই হবে। প্রথম তলাতে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং বসার স্থান তৈরি করা আছে। যেখান থেকে পর্যটকরা প্যারিস শহরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। 

 বিবাহ একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যে হয়ে থাকে এটাই আমরা জানি। কিন্তু লৌহ স্তম্ভের সঙ্গে বিবাহের ঘটনা একটু অদ্ভুতই বটে। এই অদ্ভূত ঘটনাটি ঘটে 2007 সালে। যখন একজন মহিলা নিজের দাম্পত্য জীবনের থেকে বিরক্ত হয়ে যান এবং আইফেল টাওয়ারের সঙ্গে বিবাহ করে নেন । পরবর্তীকালে এই মহিলা নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন এরিকা লা টুর আইফেল। 

প্যারিস শহরের এই ঐতিহ্য শালী জিনিসটিকে সাজাতে প্রায় কুড়ি হাজার বাল্ব এর প্রয়োজন হয়। আপনারা আরো একটি ঘটনা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন যে গরমকালে রেল লাইনের মতো আইফেল টাওয়ারের চড়াও 6 ইঞ্চির মত বেড়ে যায় এবং সূর্যাস্তের পর চওড়া কিছুটা কমে যায়। এই অদ্ভূত ঘটনাটি স্থানীয় মানুষের কাছে আগে আশ্চর্য মনে হল এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আইফেল টাওয়ারে জনপ্রিয়তা এত বেশি যে পৃথিবীতে এই আইফেল টাওয়ারের ত্রিশটিরও বেশি রেপ্লিকা দেখা যায়। 

এত সুন্দর এবং অবাক করা নিদর্শনের রাত্রে ফটো তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ধরা হয়। কারণ সেখানকার সরকার টাওয়ারের আলোকসজ্জা টিকে নিজস্ব কপিরাইট হিসেবে মনে করেন। এই রকম অনেক অবাক করে দেওয়ার ঘটনা আইফেল টাওয়ার এর সঙ্গে যুক্ত আছে যা সত্যিই আপনাকে অবাক করে দিতে যথেষ্ট।

পৃথিবীর বেশ কিছু দেশ যেমন জাপান, আমেরিকা এরা নিজেদের জনবহুল শহর গুলোতে এই রেপ্লিকা গুলি তৈরি করেছে। যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আইফেল টাওয়ারের নির্মাণকারী গুস্তাভে আইফেল টাওয়ারের এক হাজার ফুট উপরে তৃতীয় তলায় নিজের জন্য একটি প্রাইভেট ঘর তৈরি করেন। এই ঘরটির সমস্ত বিখ্যাত মানুষের নিয়মিত যাতায়াতের জায়গা ছিল। তাই  এইসব বিখ্যাত মানুষের আবিষ্কারের নিদর্শন বর্তমান পর্যটকরা ঘরটি পরিদর্শনের সময় দেখতে পারেন।

ইংল্যান্ড সরকার এই বিশাল টাওয়ারের ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজের দেশে আইফেল টাওয়ারের চেয়েও উঁচু একটি টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা 1891 সালে লন্ডনে শুরু করেন। কিন্তু টাওয়ারের ভিতের অস্থিরতা দেখে 1907 সালে সেটিকে ধ্বংস করে ফেলা হয়। 

ভিক্টর লাস্টিগ নামে একজন ব্যাক্তি এক লোহা ব্যবসায়ীকে আইফেল টাওয়ার বিক্রি করে দেন। 
ঘটনা টি অবাক মনে হল একদম সত্যি ঘটনা। ভিক্টর এক লোহা ব্যবসায়ীকে টাওয়ারটি কে নিজের বলে প্রমাণ করে দেন। কিন্তু ব্যবসায়ী লোকসমাজে বদনামের ভয়ে কোন জায়গায় অভিযোগ করেননি।




তো এই ছিলো নিদর্শনের প্রতীক আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে কিছু  তথ্য। 

1 টি মন্তব্য :

  1. ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে জুলেস গ্রেভি (Jules Grévy) প্রেসিডেন্ট হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হন। এই সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান লোক্রোয় (Édouard Lockroy)। ১৮৮৬ ক্রিষ্টাব্দের ১লা মে-তে, লোক্রোয় আইফেল টাওয়ারের গুস্তাফ আইফেলের নকশার অনুমোদনের ঘোষনা দেন। ১২ই মে-তে এই নকশার বিষয়টির সাম্ভ্যবতা নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দল পরীক্ষা করেন। ১২ই জুনে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর আরও বহু বৈঠকের পর ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারিতে গুস্তাফ আইফেলের সাথে সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর এই টাওয়ারটি তৈরির কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ তারিখে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

    উত্তরমুছুন