Knowledge is Power 😎

টাইটানিক জাহাজের অজানা কিছু রহস্য | Unknown Facts Behind Titanic Sinking in Bengali by Bengaligossip24

কোন মন্তব্য নেই

 টাইটানিক জাহাজের অজানা রহস্য 




Unknown Facts Behind Titanic Sinking

বিংশ শতকের শুরুতে নতুন একটি জাহাজ নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। জাহাজটি এতো বড়ো এবং মজবুত যে জাহাজটির নির্মাতারা ভবিষৎ বাণী করেছিলেন স্বয়ং ভগবানও এই জাহাজকে ডোবাতে পারবে না। জাহাজটির নাম ছিল টাইটানিক। জাহাজটি ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল রাত এগারোটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে উত্তর আটলান্টিক সাগরে ডুবন্ত আইসবার্গের সাথে ধাক্কা লেগে জলের তলায় ডুবে যায় এই টাইটানিক। তাও আবার প্রথম যাত্রাতেই। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটে প্রায় পনেরোশোর অধিক যাত্রীর। বাকি যাত্রীরা কোনো রকম বেঁচে গেলেও পরবর্তী সময়ে তাদের বয়ে বেড়াতে হয়েছে এই দুঃস্বপ্ন।  

টাইটানিক জাহাজটির ডিজাইনার টমাস অ্যান্ড্রু দাবি করেছিলেন টাইটানিক কোনো দিনই জলে ডুববে না। আসলে তিনি এমনি এমনি সেই কথা বলেন নি। টাইটানিক জাহাজটির ডিজাইন এমন ভাবে  হয়েছিল যা সকল প্রকার ঝড় এবং প্রতিকূল অবস্থাতেও সমুদ্রে ঠিক ভাবে চলতে পারবে। কিন্তু যেদিন টাইটানিক ডুবে যায় সেই দিন টাইটানিকের বয়স ছিল মাত্র চার দিন। আপাত দৃষ্টিতে আইসবার্গের সাথে ধাক্কায় টাইটানিক ডোবার কারণ  হলেও এর কোনো সঠিক যুক্তি কোনো গবেষকই আজ পর্যন্ত দিতে নি। এক এক গবেষক এক এক কারণ উদঘাটন করেছেন। আর এর ফলেই এই জাহাজ  ডুবে যাওয়ার ঘটনা রহস্যময় হয়ে উঠেছে।

টাইটান ছিল গ্রিক পৌরানের সৃষ্টির শক্তিশালী দেবতা। এই দেবতার কাজ ছিল শুধুমাত্র সৃষ্টি করা। তারই নাম অনুসারে এই জাহাজের নাম রাখা হয় টাইটানিক। এটি আসলে জাহাজটির সংক্ষিপ্ত নাম। এর পুরো নাম হলো আর এম এস টাইটানিক বা রয়াল মেইল স্টিমার টাইটানিক।

টাইটানিক জাহাজটির নির্মাণ কাজ শুরু ২০০৭ সালে। পাঁচ বছর একটানা কাজ করার পর এই জাহাজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। হল্যান্ডের হোয়াইট ষ্টার কোম্পানি এই জাহাজটি নির্মাণ করেন। ষাট হাজার টন ওজন এবং ২৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই জাহাজটি নির্মাণ করতে সেই সময় খরচ হয়েছিল ৭৫ লক্ষ ডলার। এতো বড়ো আকারের জাহাজ নির্মাণ করা সেই সময়ের মানুষ কল্পনাও করতে পারতো না। ১৯১২ সালের ১০ই এপ্রিল সাউদমতম থেকে যাত্রা শুরু করে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে। সেই সময় টাইটানিকের মোট যাত্রী ছিল ২২০০ জন।

টাইটানিকের প্রথম শ্রেণীর  ভাড়া ছিল ৩১০০ ডলার। আর নরমাল ভাড়া ছিল ৩২ ডলার। সেই সময় টাইটানিক নিয়ে সারা বিশ্বে হৈচৈ পরে গিয়েছিলো। তাই সবাই চেয়েছিলো টাইটানিকের এই ঐতিহাসিক যাত্রায় সামিল হতে। টাইটানিক জাহাজটি যখন বন্দর থেকে ছেড়ে যায় তখন বন্দরে বিশাল  জন সমাগম হয়েছিল। নির্ধারিত ৬  যাত্রাকে সামনে রেখে চলা শুরু করেছিল এই টাইটানিক। প্রথম দিন ভালোই কেটেছিল জাহাজের যাত্রীদের। ১৪ ই এপ্রিল দুপুর ২ টার দিকে আমেরিকা নামক একটি  জাহাজ থেকে রেডিও সিগনালের মাধ্যমে টাইটানিকের ক্যাপ্টেনদের জানানো হয় তাদের যাত্রার সামনের বিশাল আকারের একটি আইসবার্গ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে মিসাবা নামক আরেকটি জাহাজ থেকেও এই একই ধরণের সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছিল।

সেই সময় টাইটানিকের রেডিও যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন  জ্যাক ফিলিপ্স এবং হ্যারল্ড ব্রাইড। দুইবারই তাদের কাছে সেই বার্তাটি অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। তাই তারা এই সতর্ক বার্তা টাইটানিকের মূল নিয়ন্ত্রকদের কাছে পাঠায় নি। টাইটানিক দুর্ঘটনায় ৪০ মিনিট আগে ক্যালিফোর্নিয়ান জাহাজের মূল নিয়ন্ত্রক টাইটানিকের রেডিও অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করে এই আইসবার্গটির সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাইটানিকের রেডিও অপারেটরা সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। বলাই বাহুল্য  তাদের এই হেয়ালীপনার জন্যই টাইটানিক ডুবে ছিল।

Unknown Facts Behind Titanic Sinking


আটলান্টিকের তাপমাত্রা তখন শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি। আকাশ পরিষ্কার থাকলেও আকাশের চাঁদ দেখা যাচ্ছিলো না। টাইটানিক যখন দুর্ঘটনার কাছাকাছি পৌঁছে যায় তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন এই আইসবার্গটি দেখতে পান।

আইসবার্গ হলো সমুদ্রে ভেসে থাকা টুকরো টুকরো বরফ কণা। এগুলির একটি বিশেষত্ব হলো ৮ ভাগের মাত্র ১ ভাগ জলের উপরে থাকে। মানে এটার বেশিরভাগ অংশই জলের নিচে থাকে। তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন জাহাজটিকে দক্ষিণ দিকে ঘুরিয়ে নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব প্রচেষ্টায় বৃথা যায়।  জাহাজের ডান দিক আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধীরে ধীরে সেখানে চিড় দেখা দেয়। টাইটানিক জাহাজটি  জায়গায় ডুবে ছিল সেই জায়গাটির নাম হলো নিউফাউন্ডল্যান্ড।

টাইটানিকে ৬ টি কম্পার্টমেন্ট ছিল। টাইটানিক কিন্তু সর্বোচ্চ চারটি কম্পার্টমেন্ট জল শুদ্ধ ভেসে পারতো। কিন্তু সেই সময় টাইটানিকে পাঁচটি কম্পার্টমেন্টে জল ঢুকে গিয়েছিলো। এছাড়া টাইটানিকে জল প্রতিরোধ করার জন্য ১২ টি গেইট ছিল কিন্তু বরফের সাথে ধাক্কা লাগার কারণে  সব গুলি গেইট খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। জল ভর্তি হয়ে ধীরে ধীরে জলের তলায় তলিয়ে যেতে থাকে এই টাইটানিক।

টাইটানিকের নিয়ন্ত্রকরা ধীরে ধীরে বুজতে পারে যে টাইটানিককে বাঁচানো আর সম্ভব না। এর পর রাত ১২ টার সময় লাইট বোর্ট নামানো শুরু হয়। সেই সময় যাত্রীদের  কাছে যথেষ্ট সময় ছিল নিজেদের বাঁচানোর  কিন্তু যাত্রীদের তুলনায় লাইট বোর্ট এর সংখ্যা ছিল অনেক কম। তাই প্রথমে শিশু এবং মহিলাদের নিয়ে যাওয়া হয়। টাইটানিকের অনেক লাইট বোর্ট ধারণের ক্ষমতা ছিল। কিন্তু যেহেতু টাইটানিক বানানোর সময় এর ডিজাইনাররা বলে ছিল টাইটানিক নাকি কোনো দিনই ডুববে না সেই জন্য  বেশি পরিমানে রাখা হয় নি। টাইটানিকের খুব কাছাকাছি আরেকটি জাহাজ দেখতে পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই জাহাজটির সঠিক ব্যখ্যা কেউ দিতে পারেনি। তবে অনেক গবেষক মনে করেন ওটা ক্যালিফোর্নিয়ান জাহাজটি ছিল। ডুবন্ত অবস্থায় টাইটানিকের ক্যাপ্টেনরা ক্যালিফোর্নিয়ান জাহাজ থেকে সাহায্য চেয়েছিলো কিন্তু সেখান থেকে  কোনো সারা শব্দ পাওয়া যায়নি।

রাত ২ টার মধ্যে পুরো জাহাজ ভেঙে আটলান্টিকে তলিয়ে যায়। সেই সময় সেখানে পুরো বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে যায় যার কারণে সেখানে  ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাত ৪ টা  নাগাদ দ্য কাফেসিয়া নামক জাহাজটি এসে বাকি প্যাসেঞ্জের গুলিকে উদ্ধার করে নিউ ইয়র্কের দিকে রওনা হয়েছিল।

অনেকের ধারণা টাইটানিক জাহাজটি অভিশপ্ত ছিল। সেই জন্য টাইটানিককে নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। ১৯৯৮ সালে টাইম নিউস  এই প্রসঙ্গে বলেছিলো টাইটানিকে নাকি এক মিশরীয় রাজকুমারীর অভিশপ্ত মমি ছিল যার কারণে টাইটানিক ডুবে ছিল।

এর পর কেটে যায় অনেক বৎসর।  ১৯৯৫ সালে টাইটানিকের খোঁজ শুরু করে একদল বৈজ্ঞানিক। যেই স্থানে টাইটানিক জাহাজটি ডুবে ছিল সেই স্থানে টাইটানিকের কিছু ধ্বংশাবশেষ পাওয়া যায়। টাইটানিককে নিয়ে অনেক গবেষণা করা হলেও আজও এর সঠিক রহস্য উদঘাটন  হয় নি। 

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন